খানসামায় ১৫ একর জমির ধান নষ্ট করে দিল প্রতিপক্ষ

Share

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিনাজপুরের খানসামায় এক গ্রামের ১২০ জেলে পরিবারের ৩০ বিঘা জমির বোরো ধান নষ্ট করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

রবিবার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের দাসপাড়ার আত্রাই নদীর চরে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের ভোগডোমা এলাকার কয়েকটি পরিবার এ ঘটনা ঘটায়। বর্তমানে জেলেদের এখন অবসর সময় কাটছে। তাই পরিবার পরিজন মিলে নদীতে ধান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে স্বাধীনতার পর থেকেই। এরই মধ্যে ধানের চারা রোপনের ২০ দিন পর ধানের রোয়া উপ্রে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে। এর আগেও দুই উপজেলার নদীর সীমানা নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। এরপর দুই উপজেলার প্রশাসনের মাধ্যমে নদীর উপরে সীমানা নির্ধারণ করার পরেও এ ঘটনা ঘটে।

পরবর্তীতে সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে উপ্রে ফেলা রোয়াসহ নতুন রোয়া রোপন করে জেলে পরিবারের সদস্যরা।

অভিযুক্তরা হলেন- বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগডোমা এলাকার রহিম উদ্দিন, কলিম উদ্দিন, রফিকুল ইসলামসহ আরো অনেকে।

ভুক্তভোগী জেলে অমূল্য বলেন, আমাদের খুব হুমকি দেয়। আমাদের ছেলেরা মাছ ধরতে পারে না। আমরা এই বোরো ধান চাষ করে খাই। আমাদের তো নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নেই, এগুলা করেই চলি। আমরা এর বিচার চাই।

ভুক্তভোগী জেলের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী রাতে মাছ ধরতে এলে অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া দিয়ে থাকে। আমরা দশে মিলে বাঁশের ঝাড় নদীতে দিয়েছি। সেইখানে তারা গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে আমাদের চাষকৃত মাছ মেরে ফেলে। আমরা খুব কষ্ট করে এই বোরো ধান লাইগিয়েছি, সেই ধানও তারা নষ্ট করে দিল। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।

আরেক ভুক্তভোগী জেলে মো. তফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর ধারে ধান লাগিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছি। ইউএনও সাহেবরা বলেছিল নদীর চরের নিচের দিকে চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতে। তবুও তারা আমাদের বিভিন্ন ধরনের অন্যায়, অত্যাচারসহ হুমকিধামকি প্রদান করছে। আমরা অনুমতি নিয়েই ধান লাগিয়েছি, এখন ধানের মাঠে সার দেওয়ার সময় হয়েছে অথচ তারা ধান ক্ষেতগুলো নষ্ট করে দিল। এর সুষ্ঠ বিচার চেয়ে ক্ষতিপূরণ চাই। এতেও তারা যদি না মানে, আমরা পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনে যাবো।

অভিযোগের বিষয়ে প্রতিপক্ষ রহিম উদ্দিন বলেন, ২০০৭ সালে তাদের সঙ্গে আমার একটা ঝামেলা হয়। এরপর একটা মামলা করি। পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের পরামর্শে মামলাটি উঠিয়ে নেই। এছাড়াও তারা একটি লিখিত দেয় আর কোন দিন নদীতে আসবে না। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে একই ঘটনা আবার ঘটাইলো।

খামারপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আশরাফ আলী বলেন, জেলেরা প্রতি বছর ২০ থেকে ৩০ বিঘা বোরো ধান রোপন করে মাছ ধরার পাশাপাশি। এ দিয়েই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। কে বা কাহারা গভীর রাতে তাদের স্বপ্নের ফসল নষ্ট করে দেয়। এটা খুবই নিন্দনীয় কাজ। আমরা এর সুষ্ঠ সমাধান চাই।

বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফজলে এলাহী বলেন, এক উপজেলার জায়গায় অন্য লোক ধান রোপন করলে, আমরা কি করবো? তারা সেটেল না হয়ে কেন এ কাজ করল? তাদের নিয়ে দুই উপজেলার প্রশাসন নিয়ে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে।

খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, এ বিষয়ে জেলায় আলোচনা করেছি। শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দুই উপজেলার ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা সমাধান করবে। যদি সমাধান না হয়, তাহলে জরিপ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করা হবে।

Recent Posts

আর্কাইভ

সকল ক্যাটাগরি

Related Articles

বীরগঞ্জে বিশ্বব্যাপী হরতালের প্রতি সমর্থনে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক ফিলিস্তিনের আহ্বানে ডাকা বিশ্বব্যাপী হরতালের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে...

বীরগঞ্জে সচেতন মূলক শিশু সহিংসতা ও শিশু বিবাহ প্রতিরোধ অনুষ্ঠিত

নিজস্ব প্রতিবেদক দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সচেতন মূলক শিশু সহিংসতা ও শিশু বিবাহ প্রতিরোধে...

বীরগঞ্জে জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও নগদ অর্থসহ আটক ৬

নিজস্ব প্রতিবেদক দিনাজপুরের বীরগঞ্জে জুয়া খেলার সরঞ্জাম ও নগদ অর্থ ১০ হাজার...

ঠাকুরগাঁয়ে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও মিলনকে জীবিত পেল না পরিবার, গ্রেফতার ২

নিজস্ব প্রতিবেদক অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলন হোসেন নামের এক যুবককে অপহরণ...

দিনাজপুর জেলা ও বীরগঞ্জ উপজেলার সকল খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন।

নির্বাহী সম্পাদক: নাজমুল হাসান সাগর | প্রধান কার্যালয় : ঝাড়বাড়ী, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর | ইমেইল: [email protected]

ওয়েবসাইটের লেখা/ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।