বন্যা-সম্ভাবনা-বীরগঞ্জ!!!

২০১৩-১৪ তে একটা লেখা লিখেছিলাম নাম ছিল “সমস্যা সম্ভাবনা এবং বীরগঞ্জ”।
ছোট মাথায় যা এসেছিল লিখেছিলাম। সেই লেখার টাইটেলের মত সমস্যা এবং সম্ভাবনাগুলোই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে এখনো।
তবে নতুন আরো অনেক কিছু সহ।

আজ, শুধু সম্ভাবনার কথাই বলা যাক।

কয়েকদিন আগের বন্যায় আর্থিক হিসেবে বীরগঞ্জের কত ক্ষতি হয়েছে জানি না, তবে আমার চোখে এই বন্যা অনেক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এত গুলো মানুষ নিজের এলাকার জন্য কাজ করার জন্য প্রস্তুত আছে, এটাইবা কম কিসের??

বীরগঞ্জ কোন জায়গা না হয়ে যদি কোন মানুষ হতো তাহলে হয়তো তার চোখে আনন্দ অশ্রুই আসতো।

সেটা যেটাই হোক, বন্যা কবলিত মানুষগুলোর জন্য এত এত মানুষ এভাবে তড়িৎ গতিতে এগিয়ে আসবে ,কে ভেবেছিল??
মানবিক ব্যাপারটা চিন্তা করতেই ভালো লাগছে।আজকের লেখাটা সেই “মানুষসমষ্টি” গুলোকে নিয়েই হোক ,

#বীরগঞ্জ_সমিতি
এই সমিতির মুখপাত্র বাবু ভাই এর ম্যাসেজেই মূলত বন্যা সংক্রান্ত ঘুম ভাঙ্গে বীরগঞ্জের বাইরে থাকা মানুষগুলোর। ব্যাক্তিগত ভাবে আমিও সকাল নয়টায় ম্যাসেজ পেয়ে সবার আগে বীরগঞ্জে আমার মাকে ফোন করি!!
আমি তখনই প্রথম জানতে পারি, “ নদীর পানি খানসামা রোডের এপাশ থেকে ওপাশে যাচ্ছে।পানি বাসার সিঁড়ী ঘর পর্যন্ত!!!”

বীরগঞ্জ সমিতি সেচ্ছাসেবক বাহিনী এত কম সময়ে এত সুন্দর করে গুছিয়ে কাজ শুরু করেছে, এটার জন্য তাঁরা স্যালুট পাওয়ার যোগ্য। বন্যার পানিতে রান্না করতে না পারা মানূষগুলোর মুখে খাবার তূলে দিতে বীরগঞ্জ সমিতিই প্রথম বন্যার পানিতে নেমেছে।
ত্রান দিতে গিয়ে হাঁটু পানিতে সমিতির মানুষগুলোর ছবি অন্যান্যদেরও পানিতে নামতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নিঃসন্দেহে।

#বুলেট_একাদশ
ফেইস বুকে নামটা প্রথম দেখে মনে হয়েছিল এই পিচ্চিগুলার( আদর করেই বললাম ? ) কাউকে নক করে বলি, “ভাই নামটা ভালো দেখাচ্ছে না, বীরগঞ্জের ভাবমূর্তি খারাপ হওয়ার চান্স আছে!!” ?
বিশ্বাস করেন, এই পিচ্চিগুলার কাজ আমাকে বিমহিত করছে!!
এদের বয়স সর্বচ্চো ১৩ থেকে ১৬ । হঠাৎ বন্যার প্রাথমিক অবস্থায় বুলেট একাদশের বুলেট গতির কাজ , এক কথায় অসাধারণ।
আনন্দে পিচ্চিগুলারে চকলেট খাওয়াইতে ইচ্ছা করছে। এই না হলে নামের সাথে কাজের মিল!!

#মিলিনিয়াম ফাউন্ডেশন ( ব্যাচ -২০০০)
দ্রুততার সাথে উনাদের উদ্যোগ , বানভাসী মানুষের মুখে খাবার তূলে দিয়েছিল, ডাক্তার সহ মেডিসিন নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন তারাই প্রথম।

#হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বীরগঞ্জের মেধামী মুখগুলোর অনেক গুলোরই জায়গা হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
প্রথম থেকে তাদের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রসংসার দাবীদার।

#SABD
বন্যা পরিস্থিতে ধীরে সুস্থ্যে কাজ শুরু করলেও অল্প সময়ে বেশী কাজ করার মত অবস্থা যে সংগঠনটির আছে তা আরেকবার প্রমান করেছে SABD। মেডিকেল ক্যাম্প, ঢেউ টীন বিতরণের পর বন্যার্ত ছাত্রছাত্রীদের খাতা কলম বিতরণ করে অনেকের প্রশংসা পেয়েছে সংগঠনটি।

#অপরুপ_বীরগঞ্জ
একটি ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ আর কয়েকজন এডমিন। প্রাথমিক অবস্থায় ফান্ড কালেকশনে বিষদ ভাবে অন্যান্য গ্রুপকে সহায়তা করেছে।
তাদের এই সহযোগিতার দৃষ্টান্ত বীরগঞ্জের অতীত “ঠেলা ঠেলী”, সংগঠনের মানসিকতার মধ্যে নতুন ধারার জন্ম দিবে বলেই বিশ্বাস করা যায়।

এই হ্যাশ ট্যাগ পয়েন্ট গুলো ছাড়াও আরও কমপক্ষে ১০ টা গ্রুপ কাজ করেছে এবারের বন্যায়।

লেখার শুরুতে সম্ভাবনার কথা বলছিলাম , এতক্ষণ যা বললাম আমার চোখে এগুলোর মধ্যে আমি শুধু সম্ভাবনাই দেখেছি এমন টা নয়,দেখেছি ,মাতৃভূমির জন্য ভালোবাসা,আবেগ এবং তারুন্যের উচ্ছাস।

আজকের সম্ভাবনার লেখাটা একটা খবর দিয়ে শেষ করি।
“ টাকার অভাবে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা ৪ জন মেধামী মুখের দায়িত্ব নিয়েছে “বীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন” ।

কি বারে ???
সম্ভাবনা খুঁজি পাছেন???

তৌফিক রয়াল, কলামিস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *