বীরগঞ্জ নিউজ ২৪ ডেস্কঃ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ঢাকায় অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন কর্মচারীকে দিয়ে নিজের দুটো কোর্সের পরীক্ষা নেয়া ও পরীক্ষার পর ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনে পরীক্ষার্থীদের ভাইভা সমালোচনার মধ্যেই এবার নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।এর আগে ক্যাম্পাসে দীর্ঘ অনুপস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ছিলেন তিনি।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভাকক্ষে এ পরীক্ষা নেয়া হয়। এই ব্যপারে শিক্ষকরা জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা আইনে অনুপস্থিত থেকে নিজের কোর্সের পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র এবং পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বিভিন্ন বিভাগের ২০টিরও বেশি কোর্সের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ তিনি মাসের বেশিরভাগ সময় থাকেন ঢাকায়। মাঝে মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে একদিনেই ৭/৮টি কোর্সের পরীক্ষা নেন। তার এমন পরীক্ষা গ্রহণ চলে সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত।
কিন্তু এবার তিনি তাও করেন নি। বরং তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের দিয়ে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে মোবাইল ফোনে শিক্ষার্থীদের ভাইভা নিয়েছেন ঢাকায় বসে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ ছুটি থাকার পরও দুপুরে প্রশাসনিক ভবনের সিন্ডিকেট সভাকক্ষে লোক প্রশাসন বিভাগের পঞ্চম ব্যাচের পাবলিক সেক্টর ম্যানেজমেন্ট বিষয়ের ২৫ মার্কসের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
কোর্স শিক্ষক হিসেবে পরীক্ষার সময় উপাচার্যের উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার পরিবর্তে পরীক্ষা নিয়েছেন উপাচার্যের পিএস ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কর্মচারী নিখিল চন্দ্র ও একজন পিয়ন। পরীক্ষা চলাকালে উপাচার্য ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলেও শিক্ষার্থীরা জানান।
একইভাবে বিকালে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ইস্যুজ অ্যান্ড প্রবলেম অফ ডেভেলপমেন্ট ইন সাউথ এশিয়া বিষয়ে উপাচার্যের পক্ষে ইন কোর্স ৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয়।
আগের দিন শুক্রবারও লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের একইভাবে ইন কোর্স পরীক্ষা নেয়া হয়। সেখানে ছিল ৫ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা আর ৫ নম্বরের ভাইভা। ভাইভা নেয়ার সময় ওই তিন কর্মচারী ছাড়াও সেখানে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ড. রশিদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানান, ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনে শিক্ষক রশিদুল ইসলামকে প্রশ্ন করেছেন উপাচার্য। তার কাছ থেকে শোনে উত্তর দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এভাবে ভাইভা পরীক্ষা নিয়ে মোবাইল ফোনেই তিনি আবার ওই শিক্ষককে বলে দিয়েছেন, কাকে কত নম্বর দিতে হবে।
একইভাবে গত ১৯ মে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের ৯ম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জেন্ডার স্টাডিজ বিষয়ের ওপর ভাইভা পরীক্ষা নেন শিক্ষক রশিদুল ইসলাম। ওইদিনও উপাচার্য নিজে উপস্থিত না থেকে ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনে শিক্ষক রশিদুল ইসলামের মাধ্যমে ভাইভা পরীক্ষা নেন এবং কাকে কত নম্বর দিতে হবে তার নির্দেশনা দেন।
এ ব্যাপারে লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জোবায়ের ইবনে তাহের বলেন, ‘কোর্স শিক্ষক তার সুবিধামতো সময়ে পরীক্ষা নিতে পারবেন কিন্তু তাকে অবশ্যই পরীক্ষার সময় উপস্থিত থাকতে হবে এটাই নিয়ম।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, কোর্স পরীক্ষা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্মানী পেয়ে থাকেন। যেমন, এক ঘণ্টার পরীক্ষা হলে কোর্স শিক্ষক ৫০০’ টাকা করে পান। দেড় ঘণ্টার পরীক্ষার ক্ষেত্রে পান সাড়ে ৭৫০’ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলেন, কোর্স শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনও শিক্ষক কোনোভাবেই তার হয়ে পরীক্ষা নিতে পারেন না। আর কর্মচারী দিয়ে পরীক্ষা নেয়া; সিন্ডিকেট সভাকক্ষে পরীক্ষা নেয়া কোনও অবস্থাতেই শোভন নয়।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক হয়েও লোকপ্রশাসন ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি জানতে শিক্ষক রশিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যে কেউ যেকোন পরীক্ষার ইনভিজিলেটরের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এতে কোন বাধা নেই। তাছাড়া, উপাচার্য কোন দায়িত্ব দিলে আমি তো না বলতে পারবো না।’ ভাইভা পরীক্ষা কোর্স শিক্ষকের (উপাচার্য) উপস্থিতি ছাড়া মোবাইল ফোনে নেয়া ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারবো না।’ পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্বপালনকারী উপাচার্যের পিএস আবুল কালাম আজাদ স্বীকার করেন, পরীক্ষা চলাকালে তিনি কয়েকবার সিন্ডিকেট সভাকক্ষে গেছেন।
একই পরীক্ষায় দায়িত্বপালনকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের কর্মচারী নিখিল চন্দ্র জানান, তিনি চাকরি করেন। বড় কর্তা যেভাবে হুকুম করবেন তিনি তাই করেন। এখানে ন্যায় বা অন্যায় হয়েছে কিনা তা তার জানা নেই। উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।