“লেখার শুরুতেই বীরগঞ্জের সকল সাংবাদিক ভাইদের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান-বুদ্ধিকে পজেটিভলি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন!!”
সাংবাদিকতা মহৎ একটি পেশা। নিঃসন্দেহে সমাজ ব্যবস্থায় সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যুগে যুগে অনেক পরিবর্তন এসেছে এই সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকদের হাত ধরেই।
৭১ এ এই সাংবাদিকরাই যেমন জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল তেমনি হালের “প্রজন্ম চত্বর” এই সাংবাদিকরাই তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। যুগে যুগে সাংবাদিকতার মহত্ব প্রমাণ করতে দেশের গন্ডি পাড় না হলেও চলবে।
এবার মূল ভাবনায় আসি,
বীরগঞ্জ নিয়েই যখন লিখতে হবে তখন দেশের (জাতীয়) উদাহরণটাও অনেক বেশী হয়ে যায়। বীরগঞ্জের জন্য বীরগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকতা এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের অনেক উদাহরণ এখনো বর্তমান।
নেগেটিভ একটি বিষয় নিয়েই শুরু করা যাক, আমার জানা মতে বীরগঞ্জে সাংবাদিকতার কয়েকটি ভাগ আছে, কিছুটা রাজনীতির মতই, এই ভাগাভাগির সাংবাদিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক শব্দ খুব বেশী পরিচিত “চুঙ্গি” ।
এই “চুঙ্গি” শব্দটা প্রথমবার বীরগঞ্জেই শুনেছিলাম এক মাইক্রো ড্রাইভারের মুখে, “কোন মাইক্রো ড্রাইভার অন্য কোন মাইক্রো/কার ড্রাইভারকে ভাড়া ট্রান্সফার করলেই ৫০-১০০-২০০ টাকা পর্যন্ত পেত সেই মাইক্রো ড্রাইভার।
অবাক করা ব্যাপার সেই মাইক্রো স্ট্যান্ডের চুঙ্গি শব্দটার সাথে আমাদের সাংবাদিক সমাজ খুব বেশী পরিচিত। মাইক্রো স্ট্যান্ডে ‘চুঙ্গি’ ব্যাপার টা কাস্টোমার ট্রান্সফার করা নিয়ে থাকে না, আর সাংবাদিক সমাজে থাকে এক অন্য উদ্দ্যেশ্যে, এখানে চুঙ্গি শব্দটার ভালো অর্থ এবং সরাসরি অর্থ দুর্নীতি!!
কিছুদিন আগে ছাগল এবং মানুষ এর যৌন সম্পর্ক বিষয়ক একটা নিউজ খুব বাজে ভাবে বীরগঞ্জের ভাব মূর্তি সংকটে ফেলেছিল। বীরগঞ্জের বাইরের অনেক সস্তা নিউজ পোর্টাল এই নিউজটাকে নিয়ে অনেক ট্রল করেছিল।
প্রতিবাদও হয়েছিল নিউজটার বিরুদ্ধে। কোন এক ফেসবুক গ্রুপে সেই নিউজ লিংকের নিচে বীরগঞ্জের একজন সিনিয়র সাংবাদিক “চুঙ্গি” শব্দটা উদ্ধীত করে লিখেছিলেন, ছাগল কেসের সেই পুরুষ এবং তার পরিবারের কাছ থেকে “চুঙ্গি” আদায় করতে পারেন নি বিধায় সাংবাদিক সাহেব এরকম একটি অর্থহীন নিউজ করেছেন।
ভাবা যায়?? বিষয়টা??
ছাগল ছেড়ে এবার আসি মানুষের ব্যাপারে, কোন এক নার্সিং হোমে সিজার করতে গিয়ে বীরগঞ্জের কোন “মা” মারা গেছেন। স্বজনেরা মূল রাস্তা এক ঘন্টা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানালেন।
এটা নিউজ হলো… কিন্তু দুঃখের বিষয় সেই নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে কিংবা তাদের অবহেলা কিংবা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোড়ালো কোন নিউজ আমরা লোকাল পত্র-পত্রিকা গুলো থেকে পেলাম না।
প্রশ্ন রাখতে পারি কি?? কেন এমন হলো??
আসলে এমনটা নতুন নয়, অনেক দিন ধরেই সাংবাদিকতার এই “চুঙ্গি” ব্যাপারটার ব্যাবহার দেখে আসছি ছোট্ট এই শহরটাকে কেন্দ্র করে। এসবের বাইরে বীরগঞ্জের সাংবাদিকতার আরো কিছু ব্যাপার দৃষ্টিকটূ লাগে, কোন একটা সড়ক দুর্ঘটনার নিউজে দুর্ঘটনা কবলিত যানবাহনের ছবি আসতেই পারে, তাই বলে মৃত ব্যাক্তির রক্তাক্ত কিংবা বীভৎস ছবি গনমাধ্যমে আসাটা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটাও হয়তো আমাদের বীরগঞ্জের সাংবাদিক সমাজ সঠিকভাবে বুঝতে পারে না কিংবা জানে না!!
যাই হোক, সিজারের বিরুদ্ধে এবং নরমাল ডেলিভারির পক্ষে কাজ করছেন “বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স টীম” । খুব অবাক লাগে, মেইন স্ট্রীম মিডিয়া (প্রথম আলো) এত জোড়ালো ভাবে নিউজটা কাভার করতে পারে কিন্তু আমাদের লোকাল নিউজ সেটার ধারের কাছেও নেই। অথচ, সব গুলো লোকাল মিডিয়ার উচিৎ ছিল সবার আগে এলাকার এরকম একটা পজেটিভ নিউজ বাড়ী বাড়ী (বীরগঞ্জে) ছড়িয়ে দেয়া, সচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা।
সেটা কি সম্ভব হয়েছে??
বীরগঞ্জে বন্যা হলে, বীরগঞ্জে কেউ রেইপ হলে, বীরগঞ্জে কেউ অবিচারের স্বীকার হলে আমাদের লোকাল মিডীয়া কথা বলবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু টাকার বিনিময়ে ভাগবাটোয়ারা সংক্রান্ত ব্যাপারে অবিচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলবে না এটা মেনে নেয়া কষ্টের।
আজ (বর্তমানে) আমাদের রাজনীতিবিদরা একে অপরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেন সংবাদ সম্মেলন করে, সাংবাদিকরা সেই সংবাদ সম্মেলনের নিউজ কাভারও করে কিন্তু দুঃখের বিষয় কোন সাংবাদিক কোন দুর্নীতির তদন্ত দূরের কথা তদন্ত করার ইচ্ছা কতটা পোষন করেন, সেটাও সন্দেহের বিষয়!
এসব দৃষ্টিকটূ ব্যাপার বাদে,
খুব ভালো লাগে যখন দেখি একজন বৃদ্ধ, নিরুপায় ভ্যান চালকের সহায়তার জন্য সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কেউ একজন নিউজ করে, কেউ যখন “টাকার অভাবে ঢাবিতে ভর্তি হতে না পারা মেধাবী গরীব ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে নিউজ করে,”
আরো বেশী ভালো লাগে যখন এরকম পজেটিভ সাংবাদিকতার কারণে মেধামী মুখ গুলোর সহযোগিতায় খোদ উপজেলা প্রশাসন এগিয়ে আসে, বৃদ্ধ চাচার আর কষ্ট করে ভ্যান চালাতে হয় না, সুদূর ঢাকা থেকে কেউ না কেউ চাচার সাথে যোগাযোগ করে, জানতে চায় “চাচা কেমন আছেন?”
ছাগল মার্কা নিউজ আর চুঙ্গি খাওয়ার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসুক আমাদের সবার প্রিয় বীরগঞ্জের সাংবাদিকতার কর্ণধাররা, পত্রিকা অফিস টাকা দেয় না এই অজুহাতে চুঙ্গি খাওয়ার দিন শেষ, এখন স্মার্ট সাংবাদিকতার যুগ, দুই তিনটা সমাজ পরিবর্তনের নিউজ করেন, টাকা কামানোর জন্য অবৈধ ভাবে চুঙ্গি খেতে হবে না, পত্রিকা অফিস আপনাকে বিজ্ঞাপনের ভাগ দিতে বাধ্য!!
নিজেকে শুধু নিজেদের বৃত্ত থেকে বের করে আনুন, সাংবাদিকতা মানুষের জন্য করুন, এলাকার জন্য করুন, উপার্জনের রাস্তা এমনিতেই পেয়ে যাবেন। আপনারাই আমাদের উপস্থাপন করেন, তাই আপনাদের কাছেই আমাদের এত চাওয়া, এত আশা !!
তৌফিক রয়েল | সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মী |