ইতি তটিনী

প্রিয়তম,
স্রষ্টার কৃপায় আশাকরি ভালো আছো।বুকের গহীনে লুকিয়ে থাকা ভালোবাসা আর হৃদয়ের অব্যাক্ত কথাগুলো প্রকাশ করতে আবারো লিখতে বসলাম।

আজ পূর্ণিমা,সূর্য ডোবার সাথে সাথে পূর্বাকাশে স্নিগ্ধ হাসি হেসে দেখা দিয়েছে চাঁদ। জোছনা ধারায় প্লাবিত নৈশ জগৎ। শূণ্যতার শূণ্যস্থান পুরন করে এমন এক পূর্ণিমার রাতে আমরা দুজন মিলেছিলাম এককে। সেই স্মৃতি বিজরিত শিউলি গাছের তলায়। প্রকৃতির উদ্দাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে প্রথম আমার হাতে হাত রেখেছিলে তুমি। কানে কানে বলেছিলে প্রকৃতীর প্রাণবন্ত রুপ নারী। এই প্রকৃতীর আচ্ছন্ন রুপের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে জরতার উর্ধে যেতে পারে সেই প্রকৃত সুন্দরী। এখন এসব কথা অতিত স্মৃতি মাত্র।

প্রতি মাসে নিয়ম করে পূর্ণিমা আসে,চাঁদ ও হাসে শুধু তুমি আসো না। তাই আর নিয়ম করে খোপা বাঁধা হয় না,অশ্রুধারায় ধুইয়ে গেছে কতো কাজল,আজকাল আর চোখের কোনে ঠাই মিলে তার।

ডাকপিয়নের ঝোলায় রোজ রোজ ভর্তি চিঠি। লুকিয়ে লুকিয়ে পথের ধারে রোজ গিয়ে দাড়াই, কিন্তু চিঠি আর আমার নামে আসে না। হয়তো তোমার না লেখা চিঠিটা ডাকবাক্সের এক কোনেই পরে রয়েছে। রোজ রোজ দুফোটা অশ্রুকে সম্বল করেই ঘরে ফিরি মলিন মুখে। কেন এই বিচ্ছেদ?কেন এই অবহেলা?তুমি কি তা বলতে পার?

শেষ কবে দেখা হয়েছে হয়তো তুমি ভুলে গেছো। যাওয়ার কালে আমায় দেওয়া কথাও বুঝি আজ চাঁপা পরেছে কোলাহল মাখা শহরের রাজপথে। পুষ্পগন্ধে দিগন্ত আজ মাতোয়ারা,নিষেধের বাঁধন টুটে তোমায় আজ মনের বাঁধনে জড়াতে চায় মন, দুরন্ত মায়া আকর্ষণ আজ বুকে,কিন্তু আওতার মাঝে নেই তুমি।

সাহারার তপ্ত বালুরাশি পোড়ায় শুধু আমায়,মেঘ এসে প্রবল আলোড়নে সিক্ত করার নেই কোন আশা ।আজো কি আমার কথা তোমার হৃদয়ে বাজে? নাকি কোন অদ্বিতীয়া তোমার মনে সারা জাগিয়েছে কিছুই জানিনা।

তোমায় কাছে পাওয়ার আকুতি বিচ্ছেদের গ্লানিমা আমায় কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিটি মুহুর্ত। ব্যথিত হৃদয় প্রশান্ত গম্ভীর দৃষ্টিতুলে চেয়ে থাকে তোমার প্রতিক্ষায়, হতাশা অস্পষ্ট কুয়াশা ভেদ করে ,আর্তনাদ করে ব্যথিত হৃদয়। আজ যখন আমি তোমার প্রতিক্ষায় সহস্র রজনী জাগ্রত, তুমি তখন দেনা পাওনার কড়াক্রান্তি হিসাব মিলিয়ে তা হাতে হাতে তুলে দিতেই ব্যস্ত। অভিমান অনুতাপ ভুলে তোমার ভালোবাসা পাবার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষিত মন আজ ভীষণ ক্লান্ত। অবহেলা নামক যে অপ্রতাশিত উপরি পাওনাটুকু কপালে জুটেছে তাকেই ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে নতলিরে গ্রহন করেছি। তোমার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র ক্ষোভ নেই, তোমার অনুপস্থিতে জীবনে উদ্দাম আবেগ আজ নিরাবেগ, চঞ্চলতা আজ অচঞ্চল,কামনার স্রোতে মন বিমনা,তোমাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খায় জেগেছে শঙ্কা,ঐ দূর পানে চেয়ে থাকতে থাকতে আলোতে ফুরিয়েছে দৃষ্টি,জাগরণ থেমে গিয়ে মৃত্যু এগিয়ে দিচ্ছে পথ।

জানি বিশাল আকাশকে ভালোবাসা যায় না,তার বিশালত্ব ও মনহরিত্ব দেখে শুধু মুগ্ধ হতে হয়। আসক্তি আমার ছিলো না কখনো,কিন্তু জীবনে চলার পথে তোমাকে পাশে খুব দরকার। এসব কথা যখন ভাবি তখন আমার খুব কাঁন্না পায় কিন্তু সেই কান্নায় নেই কোন আওয়াজ,আছে শুধু আমার হৃদপিন্ড ফাটা আবেগ,যা আমাকে তারিয়ে বেরায়,আর দেয় শুধুই যন্ত্রনা। দিনে দিনে নুইয়ে পড়ছে শরীর,হৃদয়ে বাসা বেঁধেছে গোপন রোগের,আমার ব্যথিত হৃদয়ের আর্তনাদ তোমার কান অবধি পৌছাবেনা জানি,কিন্তু আকাশের তারকার সজাগ আঁখি চিরকাল রাজ সাক্ষী হয়ে থাকবে।

হৃদয়ের ক্ষত বেরেই চলেছে দ্বীগুন হারে,সেই সাথে বাসা বেঁধেছে নানান রোগ। আমার সময় ঘনিয়ে এলো বলে। মৃত্যু আমায় গ্রাস করার পূর্বমুহুর্ত পর্যন্ত তোমার ফেরার পথপানে চেয়ে রইবো। যদি পার একবার এসে দেখে যেও,এই অভাগীকে। হৃদয়ের অব্যাক্ত কথাগুলো আলুথালু ভাষায় আর প্রকাশ করতে পারছিনা,চোখ বুজে আসছে আমার কোন এক প্রাচীন যন্ত্রনায়। মৃত্যুকালে তোমায় কাছে পাবার প্রবল ইচ্ছা ছিলো। তা বুঝি আর পুরণ হবার নয়,আমি ছিলাম,আছি থাকবো সেই চিরচেনা শিউলি তলায়।

হয়তো জীবন্ত,কিংবা মৃত্য কবরবাসি হয়ে,সেই শিউলি তলায় যেখান থেকে আবির্ভাব হয়েছিল আমাদের প্রেমের।তুমি ভালো থেকো,পৃথিবীর কোন দুঃখ যেন তোমাকে স্পর্শ করতে না পারে এই প্রার্থনাই করি আমার স্রষ্টার কাছে।
ইতি
তোমার তটিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *