বীরগঞ্জ নিউজ২৪ ডেস্কঃ
আরবি বছরের প্রথম মাস মুহাররম। আরবি বারটি মাসের মধ্যে যে চারটি মাসকে হারাম বা সম্মানিত বলে কুরআন শরিফ ও হাদিস শরিফ-এ ঘোষণা করা হয়েছে, মুহাররম মাস তার মধ্যে অন্যতম। আসমান-জমিন সৃষ্টিকাল হতেই এ মাসটি বিশেষভাবে সম্মানিত হয়ে আসছে। এ মাসেরই দশ তারিখ অর্থাৎ ১০ই মুহাররম “আশূরা” দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। সৃষ্টির সূচনা হয় এই দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এ দিনেই। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এ দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা এ দিনেই সংঘটিত হয ।
মহান আল্লাহর বাণী ‘আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারো, এর মধ্যে চারটি মাস অতি সম্মানিত।’ সূরা তওবা : ৩৬।
আশুরা অর্থ দশম। রব্বুল আলামিন যে চারটি মাসকে ‘আশহুরে হুরুম’ তথা অতি সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো মহররম; যা হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। আর এ মাসের ১০ তারিখের দিনটিকে আশুরা দিবস বলা হয়।
সহি হাদিসসূত্রে স্বীকৃত, এই দিনে আদি পিতা হজরত আদম (আ.)-এর তওবা কবুল হয়, হজরত নুহ (আ.)-এর নৌকা জুদি পর্বতের চূড়ায় নোঙর করে। বিশেষ করে হজরত মুসা (আ.) ও তাঁর সম্প্রদায়কে ফেরাউনের কবল থেকে অলৌকিকভাবে মুক্তি এবং ফেরাউনকে তার দলবলসহ নীল নদে ডুবিয়ে মারার মতো ঐতিহাসিক ঘটনা এদিনেই সংঘটিত হয়েছিল। অধিকন্তু এদিনে ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। এ ছাড়া আরও অসংখ্য অলৌকিক, ঐতিহাসিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এই আশুরা। সংগত কারণেই মুসলমানদের কাছে আশুরার গুরুত্ব অপরিসীম। নবী-রসুলগণ এদিনটিকে রোজার মাধ্যমে উদ্যাপন করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘রমজানের পর সব রোজার (নফল) মধ্যে আশুরার রোজা সর্বশ্রেষ্ঠ।’ তিরমিজি।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আশুরার দিনে নবীগণ রোজা রাখতেন, সুতরাং তোমরাও এদিনে রোজা রাখো।’ মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা।
হজরত আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আশুরার রোজার ব্যাপারে আমি আশাবাদী মহান আল্লাহ এর বিনিময়ে অতীতের এক বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ মুসলিম।
হিজরি ৬১ সালের এই পুণ্যময় দিনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র হজরত হোসাইন (রা.) কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করায় এ দিবসটি মুসলমানদের কাছে আরও স্মরণীয় ও শোকাবহ। তবে এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে হোসাইনি আদর্শ বুকে ধারণ করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন ভূমিকা পালন করা ও বিশ্বময় ইসলামের বিজয় কেতন ওড়ানোর মানসে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া রক্তাক্ত কারবালার অনুপম শিক্ষা। মহান স্রষ্টার দরবারে এই মিনতি যে, তিনি যেন আমাদের আশুরার তাৎপর্য অনুধাবন এবং রোজা ও ইবাদতের মাধ্যমে এই দিবসের মাহাত্ম্য স্মরণ করার তাওফিক দান করেন।