বীরগঞ্জ নিউজ ২৪ ডেস্কঃ
ছাত্রলীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের মনঃকষ্টের কথা ভেবে ঈদের আগে সংগঠনটির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না। এ উৎসবের আগে কমিটি দেওয়া হলে বেশির ভাগ মনোনয়নপ্রত্যাশীর আনন্দ মাটি হয়ে যাবে— এই চিন্তা করে ঈদ শেষে কমিটি ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্যের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে নতুন নেতৃত্বের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দিতে চান। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততাসহ রমজান মাসে প্রতিদিনই ইফতার অনুষ্ঠান থাকায় ছাত্রলীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের জন্য গণভবনে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করে তাদের সঙ্গে আলাদা করে বসা সম্ভব হচ্ছে না। মূলত এ দুই কারণে গণভবনে আটকে আছে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা। গণভবনের কয়েকটি সূত্র ও প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ দুজন নেতা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
গত ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন শেষ হয় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়া।
সূত্রগুলো জানায়, এবার ছাত্রলীগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক— শীর্ষ এ দুই পদের জন্য ৩২৩ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর আগে কখনও এত বেশি সংখ্যক ছাত্রনেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি, এটি রেকর্ড। ঈদের আগে কমিটি ঘোষণা করে এত তরুণের ঈদ উৎসব মাটি করে দিতে চান না শেখ হাসিনা।
সূত্রগুলো জানায়, ১১ মে দিবাগত রাতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ সফল হওয়ায় যে আনন্দের জোয়ার বইছিল সারাদেশে, ওই আনন্দে ভাটা না ফেলতে ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন শেষ হওয়া সত্ত্বেও সেদিন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মনোনয়নপ্রত্যাশী সবাইকে গণভবনে দাওয়াত করে খাওয়াতে চান প্রধানমন্ত্রী। এরপর সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্যের মাধ্যমে নির্দেশনা দিয়ে নতুন নেতৃত্বের হাতে সংগঠনের দায়িত্ব তুলে দেবেন তিনি। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততাসহ প্রতিদিনই ইফতার অনুষ্ঠান থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই ঈদের পরে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে বসে কমিটি ঘোষণা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শেখ হাসিনা। এই ফাঁকে সম্ভাব্য যেসব প্রার্থীকে নেতা বনানোর চিন্তা করে রেখেছেন তাদের বিষয়ে আরও বিস্তারিত খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি।
সূত্রগুলো জানায়, কেন্দ্রীয় শীর্ষ দুই পদে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ দুই পদে কাদের দায়িত্ব দেবেন তা প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যে চূড়ান্ত করে রেখেছেন। কিন্তু সেটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেরি হওয়ায় তাদের ব্যাপারে আরও গভীরভাবে খোঁজখবর নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড.আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘ঈদের আগে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা না-ও হতে পারে।’ তিনি বলেন,‘ঈদের আগে কমিটি দেওয়া হলে বড় একটি অংশের মন খারাপ হবে— এই চিন্তা করে ঈদের পরেই কমিটি দেওয়ার কথা ভাবছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
এদিকে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডির কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘খুব শিগগিরই ছাত্রলীগের কমিটি প্রকাশ করতে পারবো। তবে দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘সংগঠনের কমিটি যাতে ভালো হয়— এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিভিন্ন খোঁজখবর সংগ্রহ করছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেরি হলেও ছাত্রলীগের ভালো কমিটি আসবে। সবাই প্রশংসা করার মতো কমিটি আসবে।’
ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগের কমিটি কখন হবে তা নিয়ে কিছু বলতে পারবো না।’
গত ১১ ও ১২ মে— দুই দিনব্যাপী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন শেষ হয় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে নেতা নির্বাচনের জন্য এবার ভোটপ্রক্রিয়াও বাতিল করা হয়। ভোটের মাধমে নেতা নির্বাচনের ফলে গত কয়েকটি কমিটিতে বড় একটি অংশের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ। এরপর কমিটি নির্বাচনের দায়িত্ব চলে যায় গণভবনে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘ছাত্রলীগে যাদের নেতা বানানো হবে তাদের ব্যাপারে যাচাইবাছাই শেষ। এখন যেকোনও সময় কমিটি ঘোষণা হয়ে যেতে পারে।’
সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন