একটু সচেতনতা কি পারতো না সজীবের অকাল মৃত্যু রোধ করতে?

নাজমুল হাসান সাগর: সকাল বেলা গোসল করে খাওয়া দাওয়া শেষ করে মা কিংবা বাবার কাছে বিদায় নিয়ে দ্বিতীয় সাময়ীক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে স্কুলে গিয়েছিলো সজীব।যাবার আগে হয়তো বাবার কাছে বায়না ধরেছিলো টিফিনের টাকার জন্যে।

পরীক্ষা দিয়ে ফিরেই বন্ধুদের সাথে সখ করে নদীতে গোসল করতে গিয়ে সজীব পানিতে ডুবে মারা যায়।লাশ হয়ে ফিরে এলো বাড়িতে।এমন মুত্যু কাম্য নয়, কারোও সন্তান এভাবে চিরতরে হারিয়ে যাক এমটা চায় না কোন বাবা মা।

পানিতে ডুবে সজীবের নিখোজ হবার খবর অনেক আগেই পেয়েছিলাম । আমার মন আর শরীর সেখানে গিয়ে সজীবের মৃতদেহ উদ্বারের কাজ স্বচোখে দেখার ব্যাপারে সারা দেয় নাই।বসে ছিলাম, এক পর্যায়ে আমার সামনে দিয়েই তার লাশ ভ্যানে করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো।তবুও বসা থেকে উঠে গিয়ে সজীবের লাশটা দেখার মতো শক্তি আমি পাচ্ছিলাম না।অনিচ্ছা স্বত্বেও অগ্রজ জুয়েল ভাই এর তাগাদায় লাশটা দেখতে যেতে বাধ্য হলাম।

সজীবের বাবা মায়ের হতবিহ্বল চ্যাহারাটা দেখার জন্যে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম কিন্তু তার পারিবারিক আর সবাই এবং এলাকাবাসির আহাজারিটা ছিলো আকাশ বাতাস ভারি করে দেবার মতো।

নিউজের প্রোয়োজনে অনুজ প্রতিম জাকারিয়ার মাধ্যমে একটা ছবি তোলা হলো নিশ্বাসহীন নিথর পরে থাকা সজীবের মৃতদেহটার । ছবি তোলা শেষেই এক মুহুর্ত দেড়ি না করে ফিরে এসেছি সেখান থেকে।ফিরে আসার পর থেকেই আমার মাথায় যে জিনিসটা ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা হলো,ভুল্লী নদীর মতো একটা নদীতে পানির গোভীরতায় কিভাবে সজীব তলিয়ে গেলো? এই নদীর গভিরতা ও প্রসস্থতা একটা মোটামোটি ছোট খাটো ডাড়া বা ক্যানেলের থেকেও কম।

খোজ নেবার চেষ্টা করলাম সজীব যেখানে ডুবে গিয়েছিলো সেই যায়গাটার।খোজ নিয়ে যা জানতে পারলাম সেটা হচ্ছে। সজীব ডুবে গিয়েছিলো আমাদের তিলোত্তমা ঝাড়বাড়ীর সবুজ ছাতা ক্লিনিকের পেছনে।আরোও একটু খোজ নিয়ে যা জানতে পারলাম সেটা জানার পরে আমার শরীর হিম হয়ে গেলো। বন্যার কিছু কাল আগে কোন এক ভবন নির্মানের কাজের জন্যে(সম্ভবত সেটা সবুজ ছাতা ক্লিনিকের ভবন নির্মানের কাজ) সেখান থেকে বালি উত্তোলন করা হয়। বালি উত্তলনের কাজ করার পর সেখানে বিশাল বড় একটা গর্তের সৃষ্টি হয়।

সজীবকে যারা উদ্বার করতে ডুবুরির মতো ঝাপিয়ে পড়েছিলো পানিতে নিজের জীবন বাজি রেখে,তাদের ভাষ্যমতে সেখানে আনুমানিক বিশ ফিটের বেশী ছারা কম গর্ত হবে না।

এখন আমার ভাবনা হচ্ছে, যারা এই গর্তটা করেছিলেন তারা যদি একটু সচেতন হতেন।সেই যায়গাটা যদি বন্যার পরে ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত করে দিতো তাহলে হয়তো পানিতে ডুবে সজীবের এই অকাল মৃত্যুটা আমাদের দেখতে হতো না। কোন বাবা মায়ের হতবিহ্বল চ্যাহারা দেখতে হতো না।

কাল সকালে হয়তো সজীবের বাবার কাছে গিয়ে আর কেও স্কুলে যাবার আগে টিফিনের টাকার জন্যে বায়না ধরবে না।কালকের পরীক্ষায় সজীবের নাম ধরে রোল নাম্বার উল্লেখ করে তার কোন স্যার তাকে ডাকবে না মৌখিক পরীক্ষা নেবার জন্যে।আজ যে রাতে সজীব তোর-জোর করে কালকের পরীক্ষার জন্যে পড়া তৈরী করতো সেই রাতে সেই বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের নিকষ কালো আধার।হাজার হাজার ওয়াটের বিদ্যুতের বাতি জ্বালিয়ে ঐ আধার কাটানো সম্ভব না আর কোন দিন।

অথচ একটু সচেতনতাই পারতো সজীবের এমন অকাল মৃত্যুর মুখ থেকে বাঁচাতে। যদিও আমাদের প্রচলিত ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী আমরা মনে করে থাকি জীবণ আর মৃত্যু সম্পূর্ণ সৃষ্টিকর্তার হাতে।তবুও সচেতনতা বলে একটা কথা থাকে।সেটা যদি না থাকতো তবে মানুষ বাইক চালানোর সময় আগে থেকেই হেলমেড পরিধান করতো না।

আমরা কি পারি না আর একটু সচেতন হতে? দায়ীত্বশীলরা কি পারে না আরোও একটু সজাগ থাকতে? এবারের বন্যার পরেই কয়েক দিনের ব্যাবধানে একই এলাকার দুইটি শিশু পানিতে ডুবে মারা গেলো।এগুলো অকাল এবং অস্বাভাবিক মৃত্যু।চাইলেই এগুলো এড়ানো যায়।

আসুন এলাকা জুড়ে আমরা সবাই শোকের মাতম না তুলে নিজেরা একটু সচেতন হই এবং দায়ীত্বশীলরা যেন তাদের দায়ীত্ব সঠিক ভাবে পালন করে সে দিকে কড়া নজর রাখি।আর কোন সজীব যেন অকালে প্রাণ না হারায় আর কোন বাবা-মা কে যেনো তাদের নাড়ি ছেরা ধন হারিয়ে হতবিহ্বল হতে না হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *