মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমের অন্যতম রচনা বৃষ্টির দিন। পড়েছি, মুখস্থ করেছি। আমি গ্রামে বড় হয়েছি। রচনায় গ্রামের বৃষ্টি বাদলের দৃশ্যপট আলোচনা করা থাকে। পড়তাম আর মিলানোর চেষ্টা করতাম। সত্যিই কি আমরা এগুলা করি। কিছু বিষয় মিলত আর বাকী কিছু বিষয় কবির কল্পনা ছিলো হয়ত। শহর/গ্রামের মোটামুটি সব ছাত্রই এই রচনা পড়েছে, আনন্দ পেয়েছে। গ্রামের অনেকেই হয়ত আমার মত মেলানোর চেষ্টা করেছে, শহরের মানুষের মাঝে হয়ত গ্রামে আসার কৌতূহল জন্মেছে, আনন্দ পেয়েছে।
‘করোনা’র উৎপত্তির ফলে কিছু শব্দের সাথে আমাদের পরিচয়, হোমা-কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেসন। এই শব্দগুলোর অর্থ এখনো অনেকেই জানে না। কিছু মানুষের জানার প্রয়োজন হয়নি তাই জানতেও চায়নি। আমি অবশ্য অভিধান দেখে শিখেছি।
কি লিখতে কি লিখছি আমি নিজেই বুঝছিনা। তবে এতটুকু মাথায় রেখেছি, আজ আমি আমার কৈশরের সেই রচনা, অনুচ্ছেদের মানুষের নিয়ে লিখতে বসেছি, যাদের জীবন যাত্রা কষ্টের হলেও আনন্দের। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি বললে হয়ত ভুল হবে, ঝড়, বড়সড় ঝড়। ফেইসবুকে কিছু ফটো দেখে বুঝলাম, এই ঝড় আমার গ্রামকে লণ্ডভণ্ড করে ফেলেছে। আমার বাংলা শব্দ ভান্ডার বড্ড আটোসাটো। সাজিয়ে লিখতে চাইলেও হয়ত পারছিনা।
‘করোনা’ থমকে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে, আমাদের দেশকে, এমন কি আমাদের কল্পনার/ বাস্তবের গ্রামকেও। আমরা যাদের বিত্তবান বলে জানি, তারা করোনার হাত থেকে বাচার জন্যে ভীত। আর আমাদের কল্পনার/ বাস্তবের গ্রামের মানুষেরা ভীত অন্য কিছুতে। করোনার থেকে তাদের কাছে বড় ভয় খাদ্য। কাজ না করলে যে তাদের খাদ্য মিলবে না।
দেশ লক ডাউন, কাজ বন্ধ, চাকরীজীবীরা ঘরে বসেই বেতন পাচ্ছে, কিন্তু যারা দিনমজুর তাদের তো আর কেউ বেতন দিবে না। ক্ষুধার জ্বালা করোনার থেকেও বড্ড ভয়ানক। এখানে কোন মোটিভেশন বা সচেতনতার কথা প্রবেশ করতে পারেনা।
রচনায় যে পড়তাম, বৃষ্টির দিনে গ্রামের মানুষেরা আনন্দ করে খিচুড়ি আর ইলিশ রান্না করে, তারা আজ ভালো নেই। আজ আর আনন্দ করে খিচুড়ি রান্না করতে পারছে না। বাজার থেকে শুধু ইলিশের তাজা গন্ধ নাকে নেয়, কিন্তু কিনতে পারছে না। করোনা তাদের হাত খালি করে দিয়েছে। ঘরে চাল নেই, রান্না নেই। অনাহারের পুরো পরিবার। বাবা উতলা, মা উৎকণ্ঠিত, খাবার নেই, তারা বুঝলেও তো ছোট্ট শিশুরা বুজতে চায় না।
শহরের বস্তিতে থাকা/ দিনমজুরাও ভালো নেই। তারাও অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। আমরা বলছি আর কটা দিন, পাখি নীড়ের বসেই থাকো। কিন্তু এই কটা দিনই যে যাচ্ছে না।
পৃথিবী সুস্থ হবে শীঘ্রই, এই কটা দিন আমরা না হয় আমাদের আশেপাশের মানুষগুলোকে নিজের পৃথিবী ভেবে আগলে রাখি। যতটুকু পারি চেষ্টা করি তাদের পাশে দাঁড়ানো। নিজের সামর্থ্য না থাকলের, দু-চারজনের কাছে টাকা নিয়ে তাদের পাশে দাড়াতে পারি। তাহলে তারাও এই কটা দিন হোম-কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারবে, করোনার হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবে।
আজ মনে করার চেষ্টা করি, আমাদের সেই মাধ্যমিকের সব রচনা, অনুচ্ছেদ কথা, সেখানে যাদের দৈনন্দিন জীবনের গল্প পড়ে আনন্দ, দুঃখ দুটোই পেয়েছি, তাদের পাশে দাড়াই, নিজের কৈশরকে ফিরিয়ে আনি।
পৃথিবী সুস্থ হবে, ভালো থাকবেন আমাদের রচনা, অনুচ্ছেদের মানুষও।
রেজাউল সরকার রনি
প্রদায়ক সম্পাদক