চরম অবনতি হয়েছে দেশের উত্তর-পুর্বাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির

চরম অবনতি হয়েছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পুর্বাঞ্চলের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির। দু’দিনে দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও লালমনিরহাটে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অবর্ণনীয় দুর্ভোগে লাখ লাখ বানভাসী। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কয়েকটি জেলার রেলপথ। বন্ধ রয়েছে পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ। নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় আরো ভয়াবহ বন্যার শঙ্কায় নদীপারের মানুষ।

কুড়িগ্রামে কাঁঠালবাড়ী, রাজারহাটের কালুয়া ও ফুলবাড়ীর গোড়কমন্ডল এলাকায় বাঁধ ভেঙে বন্যার আরো অবনতি হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সড়ক ও রেল লাইন তলিয়ে গেছে। ৯ উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি। বন্ধ রয়েছে ছয়শ’ আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৮৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে বানভাসীরা।

দিনাজপুরে পূনর্ভবা নদীর শহর রক্ষা বাঁধ এবং আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে কয়েকটি এলাকা। জেলার প্রায় সব স্কুলই ব্যবহার হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে। শহর রক্ষা বাঁধ মেরামতে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। রেলপথ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় রোববার থেকে বন্ধ রয়েছে দিনাজপুরের সাথে সারাদেশের রেল যোগাযোগ।

গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়ার পানি বাড়ছেই। পানিবন্দি চারলাখেরও বেশি মানুষ। কাঁচা-পাকা অনেক সড়কই পানির নিচে। একশ’ পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাতটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ।

জামালপুরে বন্যা কবলিত এলাকায় পানি ও খাবারের তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে রোপা আমনের। ৩৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

লালমনিরহাটে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ভেঙে নুতন নুতন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি মহাসড়ক ও রেল লাইনের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় অনেক জায়গায় ট্রেন ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।

সিরাজগঞ্জে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের প্রায় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলায় শুরু হয়েছে নদী ভাঙন।

রংপুরে তিস্তা-ঘাগটসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানিতে নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। রংপুরের সাথে ৫ জেলার রেল যোগাযোগ বন্ধ । গঙ্গাচড়ার আলমার বাজারে পানিতে পড়ে মারা গেছে দুই শিশু।

বগুড়ায় ২০টি গ্রামের মানুষ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। শষ্যভান্ডার খ্যাত আদমদিঘী, দুপচাচিয়া, শিবগঞ্জ, কাহালুর বিস্তির্ণ এলাকার রোপা আমন তলিয়ে গেছে।

নওগাঁয় ভেঙে গেছে আত্রাই নদীর বাঁধ। প্লাবিত হয়েছে আটটি ইউনিয়ন।

সুনামগঞ্জে প্রধান সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় তৃতীয় দিনের মতো তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুরের সাথে জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। চরম ভোগান্তিতে পানিবন্দী মানুষ। বন্যা দুর্গতদের বেশিরভাগই এখনো পাননি সরকারি সহায়তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *