চোখগুলো বিমর্ষ কেন?

চিত্রকর্মগুলোতে দৃশ্যের আড়ালে দৃশ্য, ছবির অন্তরালে লুকানো আছে ভিন্ন গল্প। এখানে যেনবা আছে গোপন কোনো সংকেত। কথাগুলো বললাম মোহাম্মদ ইকবালের সাম্প্রতিক চিত্র প্রদর্শনী নিয়ে। ‘সাইলেন্ট রিভেলেশন’ বা ‘নীরব বিপ্লব’ শিরোনামে তাঁর প্রদর্শনী দেখতে গ্যালারিতে ঢুকতেই প্রথমে দুটি প্রশ্ন করে মন। এক. ছবিতে এত চোখ কেন? দুই. চোখগুলো বিমর্ষ কেন? মানে দেয়ালের পর দেয়াল শুধু ভয়ার্ত, বিভ্রান্ত, বিস্মিত, বিষাদাক্রান্ত চোখ আর চোখ। কিন্তু কন্যাশিশুর চোখেই কেন বারবার চোখাচোখি হবে আমাদের? এই দৃষ্টি কেন এঁকে রেখেছেন শিল্পী?

শৈশবে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছিলেন ইকবাল। এই মধ্য জীবনেও সেই যুদ্ধ ঘুরেফিরে আসে তাঁর কাছে। আসে পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধের বিভীষিকাগুলোও। ‘যুদ্ধ’ নামের গোলকধাঁধা থেকে এখনো বের হতে পারেনি পৃথিবী। প্রতিদিন সেসব যুদ্ধে নতুন ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা বাড়ছে সিরিয়ায়, ফিলিস্তিনে, কঙ্গোতে বা ইরাকে। ইকবাল তেলরঙে এঁকে রেখেছেন যুদ্ধের সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ কন্যাশিশু এবং তাদের ওই ভয়ার্ত দৃষ্টিগুলো। এই কন্যাশিশুদের জন্য নিজস্ব বেদনার রঙে প্লাবিত হয় শিল্পীর ক্যানভাস! তবে মজা হলো, তাঁর ক্যানভাসের ভেতর থাকে আরেকটি গোপন ক্যানভাস। এটা যেন অনেকটা জাদুকরের বাক্সের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা আরেকটি বাক্স।

চিত্রকলা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে গিয়ে ইকবালের অঙ্কনরীতিতে যুক্ত হয়েছে বৈচিত্র্য। রঙের জমিন হিসেবে এখন তাঁর প্রিয় হয়ে উঠেছে জাপানি কাগজ ওয়াশি, যা এ শিল্পীর ছবিকে করে তুলেছে আরও অভিনব।
জাপানের বয়স্ক নারীরা ক্যালিগ্রাফি করেন। তাঁদের দেখে এ শিল্পে তাঁরও আগ্রহ জন্মেছিল। সেটিও তাঁর ছবিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
গ্যালারিতে গেলেই ইকবালের ছবির সঙ্গে বোঝাপড়া তৈরি করা সম্ভব। সৌন্দর্যের গুণে তাঁর চিত্রকর্ম ক্রমেই নিকটবর্তী করে চিত্ররসিককে। আর যাঁরা নতুন করে পরিচিত হন তাঁর ছবির সঙ্গে, প্রকারান্তরে তাঁরা মিলিত হন এক অস্বস্তিকর সুন্দরের সঙ্গে। যাকে ছেড়ে আসা যায় না, মুখোমুখি দাঁড়ানোও যায় না। কেবলই দূরত্ব রেখে চেয়ে থাকতে হয়।

প্রদর্শনীতে ‘এক্সপ্রেশন’, ‘কনভারসেশন’, ‘পিস ইন দ্য টাইম অব ডিসকুইট’, ‘আননোন ফেস’সহ বেশ কিছু সিরিজ ছবিতে আছে নানা রঙের অভিব্যক্তি, যা প্রভাব ফেলবে অনুভূতিপ্রবণ দর্শকের চোখ থেকে মনে।
২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আঁকা ৫০টি ছবি নিয়ে ধানমন্ডি ও গুলশানের এইজ গ্যালারিতে মোহাম্মদ ইকবালের এই চিত্র প্রদর্শনী চলবে ১৯ মে পর্যন্ত।

 

#prothomalo

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *