তৌফিক রয়েল | তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে এন্যালগ পদ্ধতি বা সিস্টেমের কি হাল হয় সেটা ধারণা করতে পারা খুব বেশী কঠিন কিছু না। কিছুদিন আগেও সোনালী ব্যাংক রুপালী ব্যাংক চলতো রেজিস্টার খাতায়। এখন অনেকটাই অনলাইন সিস্টেমে চলে এসেছে ।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আপডেটেট হয়ে যখন উন্নত সেবা দেয় তখন ডিজিটালাইজেশনের সুফলটা কিছুটা অনুভব করা যায়। জন্মনিবন্ধন কার্ড থেকে শুরু করে বাসের টিকেট এখন বীরগঞ্জের কেন,বিশ্বের যে কোন জায়গা থেকে করে ফেলা সম্ভব। জমি জমা সংক্রান্ত সর্বপ্রকার কাগজপত্র নিতে সাব রেজিস্ট্রি অফিস কিংবা ভূমি অফিসে যেতে হয় না,ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে খুব সহজেই পাওয়া সম্ভব।
দুই বছর আগেও আমার পাসপোর্ট করতে দুই তিন জন মানুষ নিয়ে যেতে হয়েছিল দিনাজপুর পাসপোর্ট অফিসে। আর এখন এসব ইউনিয়ন পর্যায়েই করে ফেলা সম্ভব।শুধু ছবি তুলতে জেলাশহরের পাসপোর্ট অফিসে যেতে হয়। দালাল মামাদের চাহিদাও অনেকটা কমে এসেছে।
এর মধ্যেই ডিজিটালাইজেশনের কারণেই এসব সম্ভব হয়েছে,
এর মধ্যেই ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা প্রান্তিক জনগনের কাছে সব থেকে বেশী পৌছে দিয়েছে বিকাশ।
টাকা পয়সা লেনদেনের ধীরগতির সরকারি সিস্টেমটাকে এত কম সময়ে এত দ্রুতগতির করে ফেলা সম্ভব সেটা বিকাশ দেখিয়েছে।
ভাবতে খুব ভালো লাগে “বিকাশ” এ দেশের উদ্যোগ,এদেশের আইডিয়া। হাজার হাজার বিদেশী প্রযুক্তির ভীরে সিস্টেম পাল্টে দেয়া এরকম দেশী ডিজিটাল উদ্যোগ অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে শেখায়।
সেদিন পত্রিকার একটা নিউজ খুব বেশি ভালো লাগিয়ে দিলো,
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (পুরাতন ) এর জায়গায় যে কমপ্লেক্স হবে সেটার জন্য দেশী স্থপতিদের নকশা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে!!
সেরা একটি নকশা বাছাই করাও হয়েছে বাস্তবায়নের জন্য,পুরস্কৃত করা হয়েছে প্রতিযোগিতার আরো কিছু প্রতিযোগীকেও।
বিদেশী নির্ভরশীলতার এই পরিবর্তন টাকে যুগের চাহিদা বলা ঠিক হবে কিনা জানি না তবে এটা দরকার ছিল।
যাই হোক, অন্য একটা টপিকে যাওয়া যাক।
দিনাজপুর( উত্তরবঙ্গও বলা যায়) এর মানুষকে মফিজ বলা হয়,আবুল বলা হয়,অনেক সময় আরো অনেক তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হয়,এখনো অনেকেই মনে করে এই এলাকার সব মানুষই বোকা সোকা এবং কম বুদ্ধি সম্পন্ন।
সাইন্ট্যিফিক্যালি উত্তরবঙ্গের মানুষের আয়োডিন এবং আমিষের অভাব,একারণে মাথা একটু কম কাজ করে,
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে, দিনাজপুরের রাফু বাংলাদেশের প্রথম ভেরিফাইড এন্টিভাইরাস( কম্পিউটার সিকিউরিটি ) বানিয়েছে। হালের অধিক টি আরপি ওয়ালা গায়ক মাহফুজুর রহমান এর জন্মও দিনাজপুরের মাটিতেই,তাকে নিয়ে অনেক ট্রল হলেও উনি বাংলাদেশের একজন সফল ব্যবসায়ী এবং উদ্যোগতা। তাঁর এটিএন বাংলা চ্যনেল দিয়েই বাংলাদেশের মানুষ বিটীভির বাইরে আসতে পেরেছিল।সেই ডিজিটাল মিডিয়া আজকে বাংলাদেশের অনেক বড় একটা সম্পদ।
“ঢাকা এ্যট্যাক” এর নাম শোনে নাই এরকম সচেতন নাগরিক এদেশে নাই। সেই ঢাকা এট্যাকের পরিচালক দীপংকর দীপনও দিনাজপুরের আলো বাতাসে বড় হয়ে ওঠা একজন।
এতগুলো সমসাময়িক বিখ্যাত উদাহরণ এর সাথে ডিজিটালাইজেশন ব্যাপারটা সংশ্লিষ্ট না থাকলেও কথাগুলো বলার কারণ ভিন্ন!
এই যে এত এত তথ্য আজ হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছি সেটা কিসের বদৌলতে?
এসব তথ্য জানা থাকলে আরেকটা মাহফুজুর রহমান কিংবা দীপংকর দীপন তৈরি হতে কত সময় লাগবে??কিংবা সামিনা চৌধুরী অথবা ফাহমিদা নবী হতে?
লিটন দাস আর ধীমান ঘোষ এর কথা না হয় নাই বলি। অনুপ্রেরণা খোঁজার জন্য উদাহরণ আমাদের উত্তরবংগ তথা দিনাজপুরে অনেক অনেক।
কিন্তু আমাদের জানার অভাব,জানতে চাওয়ার ইচ্ছার অভাব। আজকের তথ্য প্রযুক্তির যুগে মফিজ বলে কোন শব্দ নাই,সবাই স্মার্ট হবে এটাই স্বাভাবিক, শুধু একটু পজেটীভ আগ্রহ এবং নিজেকে পরিবর্তন করার মানসিকতা ধারন করতে হবে।
সেদিন এক ছোট ভাই ঢাকায় নতুন এসে রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছিল, সঠিক রাস্তার সন্ধানের জন্য আমাকে যখন কল করলো আমি তাকে গুগল ম্যাপ দেখার বুদ্ধি দিলাম, ছোট ভাই ফিরতি উত্তর দিলো “এটা আমার ফোনে ইন্সটল দেয়া নাই”।
তাঁর ফোনে কোথায় গুগল ম্যাপ আছে সেটা আমি বলে দেয়ার পর সে আকাশ থেকে পড়লো বলেই মনে হলো!!!
আমাদের মফস্বলের ডিজিটালাইজেশনের এটাই একটা সমস্যা, ফেসবুক ছাড়া ইন্টারনেট আমরা বুঝিই না। আগ্রহ বশত এন্ড্রোয়েড ফোনের বিল্ড ইন ফিচার গুলো সম্পর্কেও আমাদের জানার আগ্রহ কম। এম বি(মেগা বাইট) খরচ করে জানতে চাওয়ার আগ্রহটা তৈরি হতে হয়তো আরো সময় নিবে, হয়তো সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুই পরিবর্তন হবে,হচ্ছে।
ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে মফস্বলের মানুষ আজ অনেকটাই সচেতন। সামনে হয়তো সচেতনতার আরো বেশিটাই আসছে…
জয়তু ডিজিটাল বাংলাদেশ!!