নাজমুল হাসান সাগর | ছাতনাই কলনী বাজার, নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার ভারত সীমান্ত ঘেষা তিস্তা নদী তীরবর্তি একটি মফস্বল বাজার।মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মোটামোটি সব ধরনের চাহিদার যোগান দিতে যা যা প্রোয়জন তার সবই পাওয়া যায় এখানে।এখানকার তরুন জনসংখ্যার প্রায় সবাই উত্তরাধুনিক সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে বলেই আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়।যথেষ্ট স্মার্ট,স্কুল-কলেজ পড়ুয়া,খেলা-ধুলা করা,ক্লাব ও রাজনীতির মত প্রচলিত সাংগঠনিক কাজেও এই অঞ্চলের তরুনদের অংশগ্রহণ চোখে পরার মতো।যোগাযোগ ও রাস্তা-ঘাট ভালো হওয়ায় বাহিরে বের হলেই চোখে পরে দেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের বাইকগুলো নিয়ে ছুটে চলছে এ এলাকার লোকজন। রাস্তায় দেখা বাইকারদের মধ্যে কিশোর ও যুবক এর সংখ্যা চোখে পরার মতো।সব কিছু দেখে মনে হতে পারে ভালোই তো চলছে সব।এমন ভালোর প্রত্যাশায় গুড়ে বালি পরবে তখুনি যখন জানবেন এই এলাকার অধিকাংশ তরুন ও যুবক আশংকাজনক হারে মাদকাসক্ত!শিশু,কিশোরসহ অন্যান্য বয়সিদের মাঝেও বারছে মাদকাশক্তের সংখ্যা।গাজা,মদ,ফেন্সিডিল ও ইয়াবার মতো ভয়াবহ নেশায় আসক্ত এখাকার মাদকসেবীরা।
এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ভেদে সব শ্রেনীর মানুষের মধ্যে মাদক সেবনের প্রাবল্যতা আছে।এখানকার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট একটু অন্যরকম।এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা পুরনো অর্থ্য ও বিত্যশালী।তারা দিনকে দিন আরোও অর্থ ও বিত্যের অধিকারী হচ্ছেন সাথে প্রভাবশালীয় বটে। আর এক শ্রেনীর লোক আছে যাদের কিছুই ছিলো না তারা হঠাৎ অনেক টাকার মালিক হচ্ছে।আরোও একটা শ্রেণীর মানুষ আছে এখানে যারা এক সময় মোটামোটি অর্থশালী ছিলো কিন্তু এখন তাদের আর্থসামাজিক অবস্থান একেবারে শুন্যের কোঠায়।
মাদকের প্রভাব আর আর্থসামাজিক বৈষম্যটা মাথায় রেখে কিছু প্রশ্ন আসে মনে।এই অঞ্চলে মাদকের বিস্তার যে হারে চোখে পরে সে বিবেচনায় মাদক দ্রব্য এখানে সহজ প্রাপ্য ও সুলভ দামে পাওয়া যায় নিশ্চই। খোজ নিয়ে জানা যায় ভারত সীমান্ত ঘেষা তিস্তা নদী পার হয়ে বাহারি কৌশলী পন্থ্যায় মদ,গাজা,ফেন্সিডিল ও ইয়াবার মতো মাদক প্রবেশ করে ছাতনাই কলনী বাজার এবং তৎসংলগ্ন এলাকাগুলোয়।এখান থেকেই বিভিন্ন রুট হয়ে অন্যান্য এলাকায় মাদক যায় খুব গোপনীয়তা মেনে।মাদক চোরাচালানের জন্যে বহুল ব্যাবহারিক সীমান্ত হচ্ছে ঠাকুরগঞ্জ পয়েন্ট।এখান দিয়েই মোটা দাগের সব মাদকের চালান বাংলাদেশে আসে বলে তথ্য পাওয়া যায়।
এছারা অত্র এলাকার কালিগঞ্জ জিরো পয়েন্ট হয়ে অবৈধ ভাবে আসে ভারতীয় গরু।জিরো পয়েন্ট এলাকার সীমান্তের দুই পারের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়।যার মূল কারন গরু চোরা চালানের সাথে যুক্ত থাকা।সীমান্তের দুই পাশেই দুটো গ্রামের অবস্থাই পরিবর্তন হয়ে গেছে গরু চোরা চালানের অবৈধ ব্যববসার সাথে যুক্ত হয়ে।
তিস্তা নদী থেকে পাথর উত্তলন এবং পাথর বিক্রি করা এই অঞ্চলের আরোও একটি লাভজনক ব্যাবসা।এই ব্যাবসা প্রকাশ্যে চললেও মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম নীতি, তোয়াক্কা করা হচ্ছে না আইন,কানুন।সে হিসেবে পাথর উত্তলনের ব্যাবসাটাও পুরোপুরিভাবে বৈধ না।এই ব্যাবসার সাথে অবশ্য এলাকার প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের যোগসাজশ আছে।
সীমান্ত পথে মাদক ও গরু চোরাচালানের সাথে অপেক্ষাকৃত গরীব লোকজন জরিত আর পাথর ব্যবসার সাথে প্রভাবশালীদের জরিত থাকাটা একটা প্রশ্নের উত্তর মিলিয়েছে।তুলনামুলক ভাবে গরীবরা মাদক ও গরু চোরা চালানের সাথে যুক্ত থাকায় কাচা টাকার মালিক হয়ে অর্থনৈতীক ভাবে শক্তিশালী হচ্ছে আর প্রভাবশালীরা পাথর ব্যাবসা করে এবং মাদক ব্যবসার কমিশন খেয়ে আরোও প্রভানশালীর ও ক্ষমতার অধিকারি হচ্ছে।
মাঝ খানে যে শ্রেণীটা আছে,যাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট দিনে দিনে শুন্যের কোঠায় নামছে তারাই মুলত মাদকাশক্ত,অবৈধ ব্যাবসা করতে গিয়ে নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অত্র অঞ্চলের আর্থসামজিক প্রেক্ষাপট এর ভিত্তিতে বলার চেষ্টা করা হয়েছে ঐ অঞ্চলের সাথে যুক্ত অবৈধ ব্যবসা মাদক ও গরু চোরা চালান এবং পাথর ব্যবসার কারনে বিরুপ সামাজিক প্রভাবগুলো।এর মধ্যে মাদকাশক্ত তরুন প্রজন্ম অন্যতম।
মাদক ও গরু চোরা চালানের খোলা চোখ অনুসন্ধান।পাথর ব্যাবসার কারচুপি! তিস্তা নদী পার হয়ে চোরা চালানের বিভিন্ন রুট দেখা। এই সব নিয়ে আলাদা আলাদা ধারাবাহিক লেখায় বীরগঞ্জ নিউজ ২৪ আপনাদের জানাবে এক অজানা সত্যকে।পরবর্তি পর্বে জানানো হবে মাদক চোরা চালান ও এর প্রভাব নিয়ে নির্মোহ ভয়াবহ প্রেক্ষাপট।জানতে ও বুঝতে আগামী পর্বে চোখ রাখুন অপরাধ পাতায়।