#নাজমুল হাসান সাগর
দিনাজপুর হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচুতম যায়গাগুলোর মধ্যে একটি। প্রবীণদের মুখে শোনা যায় ৮৮ সালের আলোরিত বন্যার থেকেও এবারের বন্যা দিনাজপুর তথা বাংলাদেশে বিপুল শক্তি ও ভয়াবহতা নিয়ে আঘাত হেনেছে। আমার নিজের দেখায় প্রায় সতের বছর এমন ভারি বৃষ্টিপাত হয় নাই দিনাজপুরে। এমনকি ১৭-২০ বছরে এমন বৃষ্টিপাত না হবার কারনে অনেকেই জীবনের প্রথম এই ধরনের বন্যা প্রত্যক্ষ করেছে। এতে কোন সন্দেহ নাই।
প্রায় দের যুগের মতো বন্যাহীন দিনাজপুর যে এমন বিপর্যস্ত হবে এটা যেমন কারো কাম্য নয়, তেমনি ভাবে কেউ ভাবতেও পারেনি কখনো। অনেক কাল এমন ভারি বৃষ্টিপাত আর বন্যা না হওয়ার কারনে দিনাজপুরের ভৌগোলিক বুননটা তৈরী করা হয়েছে অন্যভাবে। আমরা যখন ছোট তখন মোটামোটি ধরণের বন্যা হতে দেখেছি, আবার দেখেছি সেই বন্যার পানি নিস্কাশনের জন্যে কাচা-পাকা রাস্তায় বড় বড় কার্লভার্ট আর ফুকার বসানো ছিলো। সেখান দিয়ে অনায়েসে বন্যার পানি নিস্কাশন হয়ে যেত। ফলে বন্যার পানিতে ক্ষয় ক্ষতি খুব কমই হতো। বিশেষ করে বাড়ি ঘর খুব কমই ভাঙ্গতো।
দীর্ঘকাল বন্যা না হওয়ার কারনে দিনাজপুরের চারপাশে যে নদীগুলো আছে সেগুলোতে বেশ কিছু বাঁধও ছিলো, তবে তা সংস্কার করার প্রয়োজন ছিলো। বরং তা করা হয়নি এবং কোথাও কোথাও নতুন করে বাঁধ নির্মাণ করার প্রয়োজন ছিলো সেদিকে দায়িত্বশীলতা কর্ণপাতও করেনি! শুধু তাই নয়, কিছু কিছু বাঁধের ব্যাপারে গণমাধ্যমে খবরও প্রকাশ পেয়েছে অনেক বার। মানুষের অপরিকল্পিত বাসা বাড়ি নির্মাণ, পানির স্বাভাবিক গতি পথ রোধ করে বিভিন্ন প্রকল্প করা। ব্যাক্তি উদ্যোগে নানা ধরনের বাধ নির্মান করে নদীগুলোতে ব্যাবসা সহায়ক বিভিন্ন প্রোজেক্ট তৈরী করে মুনাফা নেবার চেষ্টা করা। সর্বপরি অপরিকল্পিত কার্যক্রম বন্যায় আমাদের এমন নাজুক অবস্থা সৃষ্টির জন্যে দায়ী। যা আমাদের বন্যা পরবর্তি অবস্থা মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে বলিষ্ট ভুমিকা পালন করতে সমস্যা করেছে।
বর্তমান অবস্থা:
আজ দুপুর ১টা পর্যন্ত শেষ খবর জানা যায়, পুরো দিনাজপুর শহরে পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। অপর দিকে দিনাজপুর শহরের বাহিরে গ্রামাঞ্চল গুলোতে ধীরে ধীরে পানি নেমে যেতে শুরু করেছে যা আশার বানী। তবে এখন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঠিক এবং উপযোগী পুনর্বাসন দরকার।
পানি নেমে যাবার পর প্রাথমিক চিকিৎসাটা খুব জোড়ালো ভাবে করা দরকার। শুষ্ক খাবারের সাথে সাথে ভারি খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা দরকার ক্ষেত্র বিশেষে।
সরে জমিনে গিয়ে দেখা গেছে কোন কোন পাকা বাড়ির দেওয়াল ফেটে ফেটে আছে। সেগুলোর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়ােজন।
তবে দেখে ভালো লাগছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবকরা মিলেমিশে নানা রকম ভারি খাবার রান্না করে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মাঝে বিতরণ করছেন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল অবশ্য। অধিকাংশ স্থানীয় রাস্তা ও হাইওয়ে রাস্তার উপর দিয়ে নদীর পানির স্রোত যাওয়ায় রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন বড় কার্লভার্ট আর ব্রীজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাতায়াত এবং যোগাযোগ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তীব্র।
গ্রাম থেকে উপজেলা, জেলা এবং ঢাকা কেন্দ্রীক যোগাযোগ ব্যাবস্থা প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম। এমনকি ভারি বর্ষণের কারনে অনেক যায়গায় বিদ্যুতের পিলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার কারনে প্রকট বিদ্যুৎ সমস্যা দেখা দিয়েছে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে। এসব সমস্যার সমাধানেও অবস্থা বুঝে দ্রুত ব্যাবস্থা নেওয়া দরকার।
এই অনাহুত বন্যার কারনে ফসলের যে পরিমান ক্ষতি হয়েছে সেটার চরা মুল্য দিনাজপুরবাসিকে প্রায় ছয় মাস দেওয়া লাগবে। অন্যভাবে উত্তরের যেসব ফসলের উপর সারা দেশ নির্ভর তার জন্যে অন্তত এক বছর সারা দেশের ভোগান্তি থাকবে অসহনীয়। এসব সমস্যা মোকাবেলা করার জন্যে এখনি বিকল্প ব্যাবস্থা ভবতে হবে।
ফসলের ক্ষয়-ক্ষতি নিয়ে আলাদা করে অন্য সময় তথ্য উপাত্ত নিয়ে লিখতে হবে। সর্বশেষ ভয়ের কোন কারণ নেই। বণ্যা পরবর্তি সময়ে ফসল ভালো হয়। পানির টানে মাটির পরিবর্তন হয়ে বেশিরভাগ যায়গায় মাটির উর্বরতা শক্তি বেরে যায়। এটা বিজ্ঞান ও ঐতিহাসিক ভাবে পরিক্ষিত। এমন সময়ে ধৈর্য্য সহকারে সব কিছু মোকাবেলা করতে হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হবে ভেবে চিন্তে। দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের দেশের মানুষ অগ্রগামী। এতটুকু বিশ্বাস নিজেদের মাঝে রাখতেই হবে।
#সুদিন আসবেই।