দেওয়ালের এক পাশে মসজিদ অপর পাশে মন্দির, ধর্মীয় সম্প্রীতির অপূর্ব মেলবন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইটের দেওয়ালের এক পিঠে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের পবিত্র মসজিদ ও অপর পিঠে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিষ্ণু মন্দির। দুই ধর্মের মতবিরোধ ছাড়াই সম্প্রীতির বিরল মেলবন্ধন দেখা মিলবে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে। এক দিকে মসজিদের প্রধানের সমন্বয়ে চলে নামাজ আদায় ও কুরআন তিলাওয়াত অপর দিকে হিন্দু ধর্মের পুরোহিতের দ্বারা হয় পূজা-অর্চনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ৬নং নিজপাড়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে রয়েছে প্রায় তিনশত বছরের পুরোনো বিষ্ণু মন্দির। ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই মন্দিরটির উত্তর দেওয়ালের অপর দিকে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় দামাইক্ষেত্র জামে মসজিদ। এ মসজিদে প্রতিদিন ১৫ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করে। সূচনা লগ্ন থেকে মন্দিরে পূজা অর্চনা এবং মসজিদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দীর্ঘদিন থেকে ধর্মীয় কার্যক্রম চললেও সেখানে কখনো কোনো মতবিরোধের সৃষ্টি হয়নি বরং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণে মুসলিমদের সহযোগিতা স্থানীয় হিন্দুদের উজ্জীবিত করে রাখে।

মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডাক্তার খাইরুল আলম বলেন, মসজিদ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো দিন মুসলিমদের নামাজিদের কেউ ব্যঘাত সৃষ্টি করেনি। দেওয়ালের অপর পিঠে অবস্থিত মন্দিরের পুরোহিত ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মসজিদের কমিটির লোকজনের সঙ্গে সুমধুর সম্পর্ক বিরাজ করছে।

মসজিদের সদস্য তুহিন ইসলাম বলেন, আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাঝে ধর্মীয় স্ববস্থানের মাধ্যমে উভয়ের ধর্মের কার্যাদি পালন করে যাচ্ছি , আমরা একে অপরের প্রতিবেশি।

সার্বজনীন বিষ্ণুমন্দিরের পূজারী তৃপ্তি রানী রায় ও উজ্জ্বল চন্দ্র রায় বলেন, আমরা ৪০ বছর ধরে এই মন্দিরে পূজা অর্চনার কাজ করে আসছি। কোনো দিন কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। বরং এলাকার মুসলিমরা আমাদের সহযোগিতা করে থাকেন। মন্দিরের পূজারী ও মসজিদের সমন্বয়ের মাধ্যমে চলে আমাদের পূজা-পার্বণ।

একই গ্রামের বাসিন্দা বীরগঞ্জ উপজেলা হিন্দু কল্যাণ ট্রাষ্ট এর সাধারন সম্পাদক টিকা রাম রায় বলেন, এক দেওয়ালের এপিঠ ওপিঠ দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থাকলেও আমাদের মাঝে কোনো বিরোধ নেই। উভয়ে উভয়কে সহযোগিতার মাধ্যমে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকি। এছাড়া উপজেলার কোথাও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। আমরা হিন্দু-মুসলিম সামাজিকভাবে বসবাস করে আসছি।

বীরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুর গফুর বলেন, আমি ইতিমধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দুটি প্রতিষ্ঠান সরজমিনে পরিদর্শন করেছি। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরল মেলবন্ধন দেখে অভিভূত। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রতিবেশীদের কথায় আমি বেশ খুশি। ভবিষ্যতেও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার আহবান জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *