প্রথম ম্যাচেই ‘ম্যাচ উইনার’ নাসির উদ্দিন চৌধুরী। দলবদলে এই ‘মাল্টি-স্কিলড’ ডিফেন্ডারকে চট্টগ্রাম আবাহনী থেকে নিয়ে আসে ঢাকা আবাহনী। তাঁর সুযোগসন্ধানী গোলে লিগ চ্যাম্পিয়নরা সাইফ স্পোর্টিংয়ের কঠিন বাধা পেরিয়ে ৩-২ গোলে জিতে প্রিমিয়ার লিগে শুভ সূচনা করেছে।
ফেডারেশন কাপে দুই দলের লড়াইয়ের মতো ম্যাচটা ড্রয়ের দিকেই যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাই হলে ঢাকা আবাহনীর আক্ষেপের শেষ থাকত না। কারণ প্রথমার্ধেই ম্যাচটা শেষ করে দিতে পারতেন এমেকা ডার্লিংটন। তাঁর সহজ গোল মিসের সুযোগে ম্যাচে ফেরা সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব ড্র প্রায় নিশ্চিতই করে ফেলেছিল। কিন্তু শেষ বাঁশির মিনিট ছয়েক আগে রায়হানের লম্বা থ্রো ঠিকঠাক ক্লিয়ার করতে পারেনি সাইফের ডিফেন্স। তাদের ডিফেন্ডার রহমতের মাথা ঘুরে আসা বলটি ৮৪ মিনিটে নাসির উদ্দিন সাইফের জালে পৌঁছে দিয়ে লিগের শুরু থেকেই এগিয়ে রাখলেন পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নদের। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত ঢাকা আবাহনী। ওয়ালি ফয়সালের ফ্রি-কিকে বক্সের ভেতর থেকে এমেকার টোকা পোস্ট ঘেঁষে বাইরে চলে গেলে সে যাত্রায় বেঁচে যায় সাইফ স্পোর্টিং। কিন্তু ২১ মিনিটে এক বুদ্ধিদীপ্ত মুভে গোল বের করে নেয় চ্যাম্পিয়নরা। ইমন বাবুর শর্ট কর্নারে ওয়ালি ফয়সাল দূরের পোস্টে দারুণ এক চিপ ফেলেন, তা হেডে এমেকা সাইফের জালে জড়িয়ে দিয়ে গোলের উদ্বোধন করেছেন প্রিমিয়ার লিগে। মিনিট ছয়েক বাদে দ্বিতীয় গোলের আয়োজন হয়ে যায়। রহমত ফাউল করে সাদ উদ্দিনের গোলের সুযোগ নষ্ট করায় পেনাল্টির সুযোগ। এমেকার পেনাল্টি গোলে আবাহনী এগিয়ে যায় ২-০ গোলে। ৪২ মিনিটে এই নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড হ্যাটট্রিক করে ম্যাচের পুরো ৩ পয়েন্ট নিজেদের করে নিতে পারতেন। সোহেল রানার কোনাকুনি বাড়ানো বলে তিনি টোকা দিলেই আবাহনী ৩-০ গোলে এগিয়ে যায় এবং ম্যাচও একরকম শেষ হয়ে যায়। সেটা করতে পারেনি, কয়েক মিনিট বাদে ইনজুরি টাইমে তারই মাসুল গুনেছে আবাহনী। জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি-কিকটি সতীর্থের মাথা ঘুরে যাওয়ার পর তপু বর্মনের হেডে ব্যবধান কমায় সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব। আবাহনী ভালো খেললেও ডিফেন্সটা ছিল নড়বড়ে। নিয়মিত ডিফেন্ডার মামুন মিয়ার অনুপস্থিতিতে যেন খানিকটা ভারসাম্য হারিয়েছে আকাশি-নীলের ডিফেন্স। মামুন জ্বরে পড়েছে তাই কেঁপে উঠেছে চ্যাম্পিয়নদের ডিফেন্সও।
প্রিমিয়ারে নবাগত সাইফের সমস্যা ফরোয়ার্ড লাইনে। তাদের কলম্বিয়ান স্ট্রাইকার সেই ফেডারেশন কাপে যেমন অচল ছিল সচল হতে পারেননি লিগের প্রথম ম্যাচেও। গতকাল সতীর্থরা দু-দুবার এই হেম্বার ভ্যালেন্সিয়ার মাথায় চমত্কার বল সাজিয়ে দিয়েও ফল পায়নি। দুবারই তাঁর হেড গেছে পোস্টের বাইরে। বিদেশি স্ট্রাইকার আনাই হয় গোলের জন্য, তারা মিস করলে স্বাভাবিকভাবে চাপে পড়ে যায় দল। অথচ বিরতির পর হেমন্ত ভিনসেন্টের বদলি হয়ে নেমেই জুয়েল রানা দুর্দান্ত এক গোল করেছেন রহিমউদ্দিনের তুলে দেওয়া বল আবাহনীর জালে পাঠিয়ে। সুবাদে ম্যাচে ফেরা সাইফ স্পোর্টিং কিছুক্ষণ দাপিয়ে খেলে চ্যাম্পিয়নদের ওপর চাপ তৈরি করলেও লিড নিতে পারেনি। ৬৬ মিনিটে জুয়েল রানা আরেকবার ওপেন করেও সুযোগ নষ্ট করেছেন পোস্টের ওপর দিয়ে মেরে। কিন্তু সেই ভুল করেননি আবাহনীর নাসির উদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রাম আবাহনী ছেড়ে আসা এই সুযোগসন্ধানী ডিফেন্ডারের ৮৪ মিনিটের হেডে লিগের দশম আসরে চ্যাম্পিয়নদের শুভ সূচনা হয়েছে। আর তাদের ক্রোয়েশিয়ান কোচ দ্রাগো মামিচের ভয়ও দূর হয়েছে, ‘আমার খেলোয়াড়দের দোষেই ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত এত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে। দুই গোল পাওয়ার পর তাদের মধ্যে ঢিলেমি এসে গিয়েছিল। তা ছাড়া গরমও ছিল, তাই ব্যবধান আরো বড় করার চেষ্টা করেনি। সেটারই শাস্তি তারা পেয়েছে সাইফ স্পোর্টিংয়ের দুই গোলে। শেষে আবার লড়াই করে তারা যে ম্যাচ বের করে নিয়েছে, সেটাও প্রশংসনীয়। প্রথম ম্যাচে কঠিন প্রতিপক্ষকে হারিয়ে শুরু করতে পারাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র : কালের কণ্ঠ