পচা ফুলকপির অংশ, কুমড়ো বা আলুর খোসা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নজির রয়েছে। এ বার পেঁয়াজের খোসা থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করলেন খড়্গপুর আইআইটি-র গবেষকরা।
আইআইটি-র মেটিরিয়াল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ভানুভূষণ খাটুয়ার তত্ত্বাবধানে গবেষণাতেই আবিষ্কার হয়েছে এই নয়া প্রযুক্তি। একইসঙ্গে গবেষণা করছিলেন ভানুভূষণবাবুর গবেষক ছাত্র সুমন্তকুমার করণ, সন্দীপ মাইতি এবং কোরিয়ার পোস্টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিনকোন কিন। পেঁয়াজ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তির খুঁটিনাটি ইতিমধ্যেই ‘ন্যানো এনার্জি’ নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত নিয়েছে।
আইআইটি-র বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, প্রতিটি পদার্থেই ধনাত্মক ও ঋণাত্মক শক্তি রয়েছে। এলোমেলোভাবে বিরাজমান এই দুই শক্তি থেকে যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, তবে তাকে বলে ‘পিজো ইলেকট্রিক’। ১৯৫৫ সালে জাপানের বিজ্ঞানী ই ফুকাদা লক্ষ্য করেন কাঠ থেকে ‘পিজো ইলেকট্রিক’ উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি আরও দাবি করেন, যে কোনও সেলুলোজ জাতীয় পদার্থ থেকেই ‘পিজো ইলেকট্রিক’ উৎপাদন সম্ভব।
জাপানের বিজ্ঞানীর এই ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই বিকল্প বিদ্যুৎশক্তির উৎস সন্ধানে গবেষণা শুরু করেন আইআইটি-র গবেষক ও শিক্ষকরা। আইআইটি-র মেটেরিয়াল সায়েন্স বিভাগের গবেষকরা জানাচ্ছেন, গবেষণায় দেখা যায়, পেঁয়াজের খোসায় অন্য সেলুলোজ জাতীয় পদার্থের তুলনায় ধনাত্মক ও ঋণাত্মক শক্তি অনেক সুবিন্যস্তভাবে রয়েছে। তাই ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে পেঁয়াজের খোসা থেকে বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য গবেষণা শুরু হয়।
আইআইটি-র গবেষকদের দাবি, চাপ প্রয়োগ করলেই পেঁয়াজের খোসার দু’টি তলের একদিকে ধনাত্মক ও অন্য দিকে ঋণাত্মক শক্তি সৃষ্টি হচ্ছে। খোসার দু’দিকে একটি সোনালি রঙের প্রলেপ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ‘ইলেকট্রোড’ বা বিদ্যুদ্বাহক। এরপর ওই পেঁয়াজের খোসার দু’দিকে দু’টি তার সংযুক্ত করলেই মিলছে বিদ্যুৎ।
গবেষক সুমন্তকুমার করণের দাবি, তাঁরা গবেষণায় দেখেছেন, একটি এক বর্গ সেন্টিমিটার পেঁয়াজের খোসা থেকে ২ মাইক্রোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। এই বিদ্যুৎ সরাসরি ব্যবহার করা যাবে। উচ্চ ভোল্টের কোনও সরঞ্জামে এই বিদ্যুৎ কাজে লাগাতে ব্যবহার করতে হবে ‘ক্যাপাসিটার’। এমনকী ব্যাটারিতেও ওই বিদ্যুৎ সঞ্চয় করে রাখা যাবে।
আইআইটি-র গবেষকদের দাবি, পেঁয়াজের খোসা থেকে তৈরি এই ‘ডিভাইস’ মানুষের শরীরেও প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে। এক সেন্টিমিটারের মতো দীর্ঘ এই ‘ডিভাইস’ হৃদ্রোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির দেহে পেসমেকারের সঙ্গেই বসানো যেতে পারে। হৃদপিন্ডের কম্পনের ফলে সৃষ্ট শক্তি কাজে লাগিয়েই এই ‘ডিভাইস’ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। ফলে পেসমেকারের ব্যাটারি বদলের জন্য কয়েক বছর অন্তর অস্ত্রোপচার করার দরকার পড়বে না।
আইআইটি-র অধ্যাপক ভানুভূষণবাবু বলছেন, “পেঁয়াজের খোসা মানুষের শরীরে কোনও ক্ষতি করে না। বরং অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কাজ করে পেঁয়াজের খোসা। মানুষের শরীরে এই ‘ডিভাইস’ রাখা হলে কোনও ক্ষতি হবে না। ফলে আগামীদিনে পেসমেকারের ব্যাটারি চার্জ করার কাজেও এই ‘ডিভাইস’ কাজে লাগানো যেতে পারে।”
সূত্র: আনন্দ বাজার