রেজাউল সরকার রনি: শীতের এই সাত সকালে ত্রিশ কিলোমিটার কুয়াশা ভেজা পথ পাড়ি দিয়ে আসতে হলো দেবীগঞ্জ শহরে । রাতেই কিঞ্চিত গলা ব্যাথা ছিলো । গলায় কাপড় পেচিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম । সকালে বাবার আদেশে নিজের সুখের ঘুম ছেড়ে আসতে হলো এই অচেনা শহরে । ঢাকা থেকে আসবে আপু, তার অপেক্ষায় বসে আছি শ্যামলি বাস কাউন্টারে । টিকিট মাস্টার বলল গাড়ি আসতে আরো ২ ঘন্টা বাকি । কথাটা শুনেই ঢোক গিললাম । এতক্ষণ তো আর বসে থাকা যায় না, তাই বের হলাম এই অচেনা মফস্বল শহরটাকে দেখতে । যদিও বাসা থেকে খুব দূরে নয় দেবীগঞ্জ তবে যাতায়াত না থাকার কারণে অচেনা ।।
এটা ঢাকা শহর নয়, তবে ঢাকার মত কর্ম ব্যস্ত শহর বলা যেতে পারে । হাজারো মানুষের যাতায়াত প্রতিদিন । হালকা রোদ পড়ছে গায়ে, হাটতে বের হয়ে আমার সানগ্লাসহীন চোখে দেখছি রঙবেরঙের হাজারো মানুষ । সবাই ব্যস্ত নিজের কাজে । প্রথমে চোখে পড়ল একটি ছোট্ট বাগান, সেখানে বসে আছে একটি পাগল । বসে বসে শসা খাচ্ছে । শীতের এই সাত সকালে বসে বসে শসা খাওয়াটা আমার কাছে একটু অদ্ভুদ মনে হলো । অনেকটা মন্দিরের বাবার মত সে । বড় বড় চুল আর দাড়ি তবে পড়নে রঙ ছটে যাওয়া ছেরা শার্ট আর অনেক পুরনো কালো প্যান্ট । তাকে দেখতে ভালোই লাগছিলো আমার । একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম প্রায় মিনিট পাঁচেক । হাতে ডিএসএলআর থাকলে হয়ত কয়েকটি ফটো ক্যাপচার করতাম তার ।
আরেকটু এগিয়ে যেতেই দেখছি একটি হকারের বিশাল জায়গা জুড়েই দোকান । দুই থেকে তিনশ বোতল তার দোকানে । সবগুলোই ঔষুধে পরিপূর্ণ । তার জোরেসরে আর অদ্ভুদ গলার আওয়াজ নজর কারছে পথচারীর । কৌতুহল বসত আমিও এগিয়ে যাই । আমি শুনেছিলাম শহরের হকাররা নাকি ম্যাজিসিয়ানদের মত লম্বা টুপি আর ঢিলাঢালা বিভিন্ন রঙের বড় পোষাক পড়ে । কিন্তু আমার মতই শার্ট আর প্যান্ট পড়েছে এই হকার ।
সকলকে বোঝাচ্ছে তার ঔষুধের গুণাগুণ আর বিভিন্ন রোগের সহজ সমাধান । আমার এখানে থেকে কাজ নেই । আমার যে ব্যাথা এটা তার দ্বারা সমাধান হবে না । তাই সামনে এগিয়ে চললাম ।
সামনে একটা স্কুল পড়লো , দেখলাম সারি বদ্ধভাবে স্কুল-পোষাক পড়া অনেক স্টুডেন্ট কোথায় যেন যাচ্ছে, সাথে তাদের আপাও রয়েছে । কোথায় সেটা জানার আগ্রহ প্রকাশ করলাম না । কারণ সবগুলোই ছিলো সাদা চামড়ার সুন্দরী মেয়ে । কৌতূহল থাকা ভালো তবে সব বিষয়ে নয় । সবগুলোই মেয়ে দেখে ভাবলাম, স্কুলটাতে কী কোন ছেলে নেই । পরে স্কুলের গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সেখানে বড় কলে লিখা দেবীগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ।মনে মনে একটু হাসলাম । পরে জানতে পারলাম কমিনিউটি পুলিশ ডে । তারা রেলিতে যাচ্ছে ।
স্কুলের গেটের সামনে বসে আছে একটি ভিক্ষুক । অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । কিছু আহ্বান করছে । মনে পড়লো সকালে বাবা দু’খানা একশ টাকার নোট দিয়েছিলেন । মানিব্যাগে দুখানা নোট দেখছিনা । তবে তাকে তো কিছু দিতে পারতাম। তাকে ওই দুখানা নোটের মধ্যে একটি দেওয়ার মত সামর্থ হয়ে ওঠেনি । এত বড় দানবীর এখনো হয়নি । মানিব্যাগের কোণে পড়ে ছিলো একটি পাঁচটাকার কয়েন । হঠাৎ সেটি চোখে পড়লো । সেটি তাকে দিয়ে হাটতে থাকলাম সামনের রাস্তা ধরে ।
অনেক ক্ষণ তো হলো, এবার কিছু পেটে দেওয়া দরকার । সামনে বড় বড় হোটেল চোখে পড়লো । তাতে যাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই । না, মানিব্যাগের সংকীর্ণতার জন্য নয় । শুনেছি শহরে টং দোকানে ভালো চা পাওয়া যায় । তাই চলেছি টং দোকানের খোঁজে । মিনিট দশেক হাটার পর পেলাম একটা । কী শহররে বাবা, চায়ের দোকানের এত অভাব । এক কাপ চায়ের চুমুকে বুঝতে বাকী রইলো না যে কথাটা সত্য । চা অনেক ভালো হয়েছে । চা শেষ করতেই টিকিট মাস্টারের ফোন এল । গাড়ি চলে এসেছে । এবার বাসায় ফেরার পালা । বিদায় দেবীগঞ্জ ।