বঙ্গ নারী কি সৌদিতে পণ্য হিসেবে যায়?

নারীরাও পিছিয়ে থাকবে না, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তারাও এগিয়ে যেতে চায়, নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে চায়। তাই তো দেশের বিভিন্ন কর্মসংস্থানে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অত্যন্ত পেশাদারিত্ব মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তবে তারা এখানেই থেমে নেই, প্রবাসেও নিজেদের বিভিন্ন কর্মে আত্মনিয়োগ করছে। প্রতিবছর হাজারও নারী প্রবাসে যাচ্ছে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে, যার সিংহভাগ যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। বাড়ছে দেশের রেমিট্যান্স এর আকার। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিদেশে এই নারী শ্রমিকেরা কতটুকু নিরাপত্তার মধ্যে কাজ করে যাচ্ছে?

বস্তুত, প্রবাসী নারীদের অন্যায়ভাবে নির্যাতন, কাজ করেও বেতন না পাওয়া, অনাহারে রাখা এমন কি ধর্ষণের অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে শত শত নারীর নির্যাতনের লোমহর্ষক কাহিনী। পাওয়া যাচ্ছে, হাজার নারীর দেশে ফিরে আসতে চাওয়ার আকুতির কল রেকর্ডিং। চোখে ঝাপসা দেখছে শত শত নারী।

বিভিন্ন গণমাধ্যম বা বেসরকারি সংস্থাগুলোর গড় হিসেব থেকে জানা যায়, ২০১৬ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৩১১ নারী শ্রমিকের লাশ বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এদের অধিকাংশই সৌদি আরব থেকে এসেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো, এদের মধ্যে ৫৩ জনই আত্মহত্যা করেছেন। এর থেকে দ্বিগুণেরও বেশি, ১২০ জন স্ট্রোকে এবং ৫৬ জনের দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঘটেছে। বিদেশগামী এই নারীদের বেশির ভাগের বয়স ২০ থেকে ৪০-এর মধ্যে।

কাতারের গণমাধ্যম আল-জাজিরায়, মধ্যপ্রাচ্য ফেরত ১১০ বাংলাদেশি নারীকর্মীর ইন্টারভিউ প্রচার হয়, যাদের মধ্যে ৯৫ জন পুরো বেতন পাননি, ৬৭ জন শারীরিক নির্যাতন ও ১৫ জন যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং ২৬ জন খাদ্যবঞ্চিত হয়েছেন।

গত কয়েকমাস আগে, সৌদি আরবে চাকরী করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মক্কা ও মদিনা ব্যাতিত জেদ্দা, রিয়াদসহ প্রায় সমগ্র সৌদি আরবে নারীদের কাজ করা বড্ড দূর্বিষহ। জেদ্দা এবং রিয়াদে বেড়ে গেছে ধর্ষণ, খুন, রাহাজানির মত কুকর্ম, অথচ সৌদি আরবে এইসব কুর্মের হদিস পাওয়া দুষ্প্রাপ ছিলো। তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, সৌদি প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে।”

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলছেন, “আমরা নারীদের পেছনে ফেলে রাখতে চাই না। নারীরা যদি যেতে চান, আমরা বাধা দিতে চাই না। আমাদের দেশে নারী-পুরুষ সমান। নারীদের আমরা সেকেন্ড ক্লাস সিটিজেন হিসেবে রাখতে চাই না। এখন আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ শ্রমিক আছে। এর মধ্যে কয়জন এ ধরনের শিকার হচ্ছে?”

উপর্যুক্ত পরিসংখ্যান দেখলে এমনিতেই বোঝা যায়, এখনো বিদেশে অবস্থানরত নারী শ্রমিকেরা কেমন আছে। কতটা নিরাপদে কাজ করছে।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালযয়ের সচিব ড. নমিতা হালদার বলছেন, ‘দেশে ফিরে, দে জাস্ট মেক স্টোরি।’

©রেজাউল সরকার রনি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *