বীরগঞ্জে ‘বেকারত্বের রাজনীতি’- এ দায় কার?

নির্বাচন সামনে ,এ সময়টাতে অনেকেই সিজনাল রাজনীতি বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠে, আমি সে দলে যেতে কখনই চাই না, আমি যেটা বলতে কিংবা লিখতে চাই সেটা একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে,আমার অভিজ্ঞতার কথা ,আমার পর্যবেক্ষণের কথা সর্বপরি বিবেকের কথা। আজ থাকছে বীরগঞ্জের নাগরিক রাজনীতি নিয়ে প্রথম পর্ব, “বেকারত্বের রাজনীতি”

শুরু থেকেই এই দেশে বেকারত্ব ভয়ংকর একটা ব্যাপার। সেই ছোট কাল থেকেই শুনে আসছি এ দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ দেশের বাইরে প্রবাস জীবন যাপন করেন শুধু মাত্র যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সন্ধানে। এর প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ জীবিকার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করেন এবং দেশে টাকা পাঠান।

১ কোটির সংখ্যাটা এখনো অফিসিয়ালি এক কোটিই ,মতান্তরে সেটা দেড় কিংবা দুই কোটি। বীরগঞ্জের রাজনীতির কথা বলতে এসে এ হিসাব কেন দিচ্ছি? বাকীটুকু পড়লে আশা করি মেলাতে পারবেন। আপাতত ১ কোটি সংখ্যাটা মাথায় রাখুন।
প্রবাস থেকে এবার আসুন নিজের দেশে, আজ একটা কোম্পানীতে চাকরীর ইন্টার ভিউ দিতে গিয়ে অনুধাবন করতে পেরেছি বাংলাদেশে বেকারত্ব কোন পর্যায়ে। উপলব্ধি বললাম একারণে যে এর আগে থেকেই জানতাম, এর প্রকটতাটাও জানতাম ,শুধু এত কাছ থেকে দেখা বাকী ছিল। সে গল্প বলতে গেলে অনেক সময় নেবে ,শুধু মোদ্দা কথাটা বলি.

সেখানে এক একজন গ্রাজুয়েট কাজ করবে বাংলাদেশের টপ কামাই করা কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে ,কাজের মান হতে হবে হাই ক্লাস ,বলতে পারেন বিশ্ব মানের। মাস শেষে এক এক জন বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করা তরুন তরুণীর শ্রমের দাম কত হবে জানেন? ৪৭ টাকা প্রতি ঘন্টা!!

আবার প্রতি মাসে ২০০ ঘন্টার বেশি আপনাকে কাজেও নিবে না। তার মানে দাঁড়াচ্ছে ঢাকার মত একটা জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা এক এক জন সম্ভাবণাময়ী তরুণ-তরুণী ,যারা বিশ্বমানের সেবা দিতে বাধ্য, তারা পাচ্ছে প্রতি ঘন্টার জন্য ৪৭ টাকা। এই শহরের রিক্সাওয়ালার প্রতি ঘন্টার রোজগারের বিষয়টার সাথে এটার তুলনা না করাই ভালো , এতে করে তাঁদের পরিশ্রমের দামের সাথে অবিচার করা হবে!

কিন্তু অন্য ভাবে একটু ভাবুন তো, যেই মানুষটা ১৬-১৮ বছর শুধু পড়াশোনা করেই গেল এবং সমাজের চোখে ডিগ্রি নেয়ার পরীক্ষা গুলোতে পাশ ও করে গেল তাকে ৪৭ টাকাতেও শ্রম বিক্রি করতে হচ্ছে? এতো গেল ২ টা আলাদা আলাদা লেভেলের বেকারত্ব কিংবা যোগ্যতা সম্পন্ন কাজ না পাওয়ার উদাহরণ।

এবার আসা যাক গ্রামের বেকারত্বের ব্যাপারে। শহরে ৪৭ টাকায় সারা মাস শিক্ষিত শ্রম বিক্রি করার একটা সুযোগ আছে,সস্তা শ্রম দিয়ে সস্তা জীবন বেছে নেয়ার একটা সুযোগ আছে , কিন্তু গ্রামে?
হ্যাঁ এটাই প্রসঙ্গ , কি অবস্থা গ্রামের ছেলেদের?
যারা অনেক বাঁধা বিপত্তি পেড়িয়ে অনার্স কিংবা মাস্টার্স পাশ করেছে শুধু একটা চাকরীর আশায় তারা কি করছে?

প্রশ্নের উত্তরটা আমিই মিলিয়ে দিচ্ছি। গতকাল প্রথম আলোর উত্তরবঙ্গ অফিসের নিয়ন্ত্রণে মফস্বল পাতার একটা প্রধান খবর ছিলো বীরগঞ্জ সংশ্লিষ্ট। সেই খবরের শিরোনাম ছিলো,’দিনাজপুর-০১’, “সাংসদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের নির্যাতন করার অভিযোগ”
সেখানে হিন্দু বোদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের এক নেতা সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, “সাংসদ টাকা খেয়ে জামাত শিবিরের লোকজনকে জয়নন্দ ডিগ্রি কলেজে চাকরী দিয়েছেন” এই লাইনটা পড়ে আমার মনে হয়েছে আসলে সাংসদের অপরাধ কোথায়? ঘুষ নিয়ে চাকরী দেয়াটা? নাকি ঘুষ নিয়ে জামাত শিবিরের লোক জনকে চাকরী দেওয়াটা?

প্রতিবেদনের পরের প্যারায় উত্তরটা খুঁজে পেলাম, বীরগঞ্জ উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক(!) অভিযোগ করে প্রথম আলোর কাছে বলেছেন,’দলীয় বা হিন্দু পরিবারের যোগ্য প্রার্থীকে চাকরী না দিয়ে সাংসদ মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে যুদ্ধাপরাধী অমুক হাজীর পরিবারের তিন জনকে জয়নন্দ ডিগ্রী কলেজে চাকরী দিয়েছেন।’ কোট এবং আন কোট এই দুটি বক্তব্যে আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন সাংসদের বিরুদ্ধে অভিযোগের জায়গাটা আসলে কোথায় এবং দলীয়,সাম্প্রদায়িকতা কিংবা ঘুষ ব্যাপারটা এখানে কতটা সাধারণ!

একটি জাতীয় দৈনিকে এরকম বক্তব্যই প্রমাণ করে গ্রামের বিশেষ করে বীরগঞ্জের চাকরীর বাজারের অবস্থা কতটা রমরমা।

টাকা নিয়ে/দিয়ে সরকারি-আধাসরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরী দেওয়াটা/পাওয়াটা এখন ওপেন সিক্রেট,এই ঘুষ দিয়ে চাকরীর বাজারে অনেক নেতাই আছেন যারা আবার চাকরী পাইয়ে দেয়ার ওকালতীও করেন। চাকরী পাইয়ে দেওয়া কিংবা পাইয়ে দেওয়াতে সাহায্য করাটাও এখন অনেক মানুষের রোজগারের হালাল পথ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই কথাটার যারা বিরোধীতা করতে চান তাঁদের প্রতি বিনীত আহবান থাকবে গ্রামের দিকে মানুষ জন থাকলে এই ব্যাপারে একটু গল্প করুণ, আমি নিশ্চিত আপনার দুই ব্লাডের মধ্যেই আপনি অন্তত ২ জনকে খুঁজে পাবেন যারা টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরীতে ঢুকেছেন। এখন একটা প্রশ্ন আসতে পারে তাহলে যাদের টাকা নাই তারা কি করছেন? কেন? ৪৭ টাকা ঘন্টা!

কিংবা জমি ভিটা বিক্রি করে মরুভূমির গরম নাইলে সারা বছর ঠান্ডার দেশে গিয়ে শ্রমিকের কাজ? এদিক থেকে বীরগঞ্জ তথা দিনাজপুর এমন কি উত্তরবঙ্গ পিছিয়ে আছে,নোয়াখালীতে তিন বাড়ী খুজলে যেখানে ২ বাড়ির কর্তা বিদেশ থাকেন সেখানে আমাদের এখানে ( উত্তরবঙ্গে ) বিদেশ যাওয়াটা এবং টিকে থাকার ব্যাপারটা ১০ পরিবারে ১ টা হবে কি না সন্দেহ আছে।
আর এই সুযোগটাই হয়তো নিয়ে ফেলছে রাজনীতির ডামাডোলে আটকে থাকা ঘুষের রাজনীতি। সেই উপরের নিউজটা পর্যবেক্ষণের পর এখন একটাই প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,“আসলে এ দ্বায় কার?”

প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুযায়ী সাংসদের? নাকি যে মানুষগুলো ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে সাহায্য করেন,তাঁদের?
নাকি যারা ঘুষ দিচ্ছে তাঁদের? আপনাদের কাছে উত্তর থাকলে জানাতে পারেন।

লিখেছেনঃ তৌফিক রয়েল
[email protected]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *