মাটির ভৌত গুনাবলী ও ধর্ম

মৃত্তিকার ভৌত গঠন
মাটি একটি প্রাকৃতিক বস্তু। ক্ষয়ীভুত শিলা ও খনিজের সাথে জৈব পদার্থ ও পানি মিশ্রিত হয়ে দিনে দিনে মৃত্তিকা উৎপন্ন হয়। কোন মৃত্তিকা নমুনা বিশ্লেষণ করলে কঠিন, তরল এবং বায়বীয় আকারে নিম্নরুপ দ্রব্য পাওয়া যায়-
ক) খনিজ দ্রব্য
১. নুড়ি বা প্রস্তর
২. বালি কণা
৩. পলি কণা
৪. কর্দম কণা
এদের প্রকার ভিত্তিক পরিমান মৃত্তিকা ভেদে ভিন্ন।
খ) জৈব পদার্থ
১. বিয়োজনশীল জৈব পদার্থ প্রয়োগকৃত জৈব সার, ফসলের অবশিষ্টাংশ, মৃত।
২. অবিয়োজিত উদ্ভিদাংশ স্থূল শিকড় ও শাখ-প্রশাখা, অন্যান্য উদ্ভিদাংশ।
৩. হিউমাস-জৈব পদার্থ বিয়োজিত হওয়ার পর সৃষ্ট কালচে পদার্থ।
৪. অণুজীব ও প্রাণী, ব্যকটেরিয়া, শ্যাওলা, ছত্রাক এক্টিনোমাইসেটিস, কোঁচো ও পোকা-মাকড়।
গ) পানি
সেচ ও বৃষ্টির পানি এবং নদী উৎস থেকে প্রাপ্ত পানি।
ঘ) বায়ু
মৃত্তিকা কণার ফাঁকে অবস্থানরত বায়ুমন্ডলীয় বায়ু। এছাড়া মাটিতে কঠিন পদার্থেও মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট, ফেরাস অক্সাইড, সিলিকণ ডাই-অক্সাইড।

মৃত্তিকা গঠন দ্রব্যের (Components) পরিমান
মাটিতে গঠন দ্রব্যের পরিমান প্রধানত দু’ভাবে উল্লেখ করা হয় যথা –
আয়তন ভিত্তিক
এবং ওজন ভিত্তিক-
যে কোন দুইটি নমুনায় মৃত্তিকা দ্রব্যের প্রকার ও পরিমানগত সাদৃশ্য হওয়ার সম্ভবনা কম। অর্থাৎ বলা যায় মৃত্তিকা উপকরণের প্রকার ও পরিমানগত বিবেচনায় মাটি অত্যন্ত অবিমিশ্র। তালিকায় সাধারন কৃষি মৃত্তিকায় গঠন দ্রব্যের পরিমান দেখানো হলোঃ-

উপকরণ

পরিমান

আয়তনভিত্তিক

ওজনভিত্তিক

মাত্রা

গড়

মাত্রা

গড়

খনিজ

৪০৫০

৪৫

৬০৯০

৭৫

জৈব

<

<

বায়ু

৫০

২৫

<

<

পানি

৫০

২৫

১৫৩৩

২৪

মৃত্তিকা উপকরণ দ্রব্যের পরিমান নির্ণয় করে তা কৃষি কাজ এবং গবেষণা কাজে ব্যবহার করা যায়। মাটির উপকরণের পরিমানগত হিসাব নানাভাবে ব্যবহার করা যায়। নিচে মৃত্তিকা দ্রব্যের আয়তন ও ওজনভিত্তিক হিসাবের প্রধান প্রধান ব্যবহার উল্লেখ করা হলো।

 

আয়তনভিত্তিক ব্যবহার ওজনভিত্তিক ব্যবহার
১। পানি সেচ ১। মৃত্তিকা গবেষণা ফলাফল
২। মাটির ভৌত গুণাবলী ২। মালির মৌলিক গুণাবলী
৩। মাটির রন্ধ্রতা ও চলাচল ৩। মাটির রাসায়নিক বৈশিষ্ট

মাটির ভৌত ধর্ম মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক ধর্মের মধ্যে মাটির ভৌত ধর্মকে প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করা হয়। মাটির ভৌত ধর্ম প্রত্যক্ষভাবে ফসল উৎপাদন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রন করে। মাটির ভৌত ধর্ম উৎপন্নের জন্য এতে বিদ্যমান স্থূল প্রস্তও থেকে অতি সুক্ষ্ম কর্দম কণা পর্যন্ত সকল প্রকার খনিজের অবদান রয়েছে। তবে সাধারণ কৃষি জমিতে স্থূল প্রস্তর ও নুড়ি আকারের দ্রব্য থাকেনা বলে প্রধানত বালি, পলি ও কর্দম কণাই বেশি উল্লেখযোগ্য। মৃত্তিকা খনিজের মধ্যে বালি, পলি ও কর্দম কণাকে মাটি কণা (Soil particle) বা মৃত্তিকা একক কণা বলে। সংজ্ঞা হিসাবে বলা যায় – দুই মিলিমিটারের কম ব্যস বিশিষ্ট নিদিষ্ট আকার মাত্রায় অন্তর্ভুক্ত খনিজ কণাকে একক কণা বলে। মাটির কণা ৩ প্রকার যথা- বালিকণা, পলি কণা ও কর্দম কণা। আকার অনুসারে বালি কণা ১-৫প্রকার এবং পলি কণা ও কর্দম কণা ২-৩ পকার হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *