নিজস্ব প্রতিবেদক
- বাবার ২০ শতাংশ আর শশুরের দেওয়া ৩৩শতাংশ এর মধ্যে বাবার ২০ শতাংশ জমি ছেলের পড়া লেখার জন্য খরচের জন্য বন্দক দিয়েছি। বর্তমানে ৩৩ শতাংশ জমির আবাদ দিয়েই চলছে আমার পাঁচ জনের কষ্টের সংসার। মেঝো ছেলে আছে ঢাকায় বড় ছেলে নিজেই কোচিং চালিয়ে করছেন পড়াশোনা পাশাপাশি প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন কঠোর পরিশ্রম। ছোট সন্তান এখনো ঠিকমতো হাটতেই শিখেনি। আমি নিজেও ২০০৬ সাল থেকে অসুস্থ শীরর নিয়েই চলছি কোন কাজকাম করতে পারিনা। বাড়ির পাশেই এক বন্ধুর কিটনাশক দোকানে কাজ করি, সেখান থেকে দুই তিন দিনে ৫ শ টাকা পাই। এটা দিয়ে চলে সংসারের বাজার খরচ। এভাবেই হাজারো কষ্ট বুকের ভিতরে জমা রেখে হাসি মুখেই কথা গুলো বলছিলেন এবারের সদ্য মেডিকেল পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার অদম্য মেধাবী মারুফের বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।
মারুফ রাণীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের শালবাড়ি এলাকার কাঠাল বাড়ি গ্রামের ইউসুফ আলী ও মরিয়ম আক্তার দম্পত্তির তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড়।
মারুফ রাণীশংকৈলের মেরিট কেয়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা শেষে, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন এবং জিপিএ – ৫ পেয়ে পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর আরেক সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাণীশংকৈল ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং এবারো মারুফ জিপিএ -৫ পেয়ে নিজেকে অদম্য মেধাবীর পরিচয় দেন। মারুফের বাবা বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন ডাক্টারের চিকিৎসা নিয়ে আসছি।এ থেকেই আমারও স্বপ্ন জাগতো আমার সন্তান কে যদি ডাক্টার বানাতে পারতাম।
বাবার স্বপ্ন পুরনেই মারুফ ২০২৪ সালে এমবিবিএস ভর্তি পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। তবে সেই স্বপ্ন পুরুন হয়নি মারুফের পরিক্ষায় ৩ নম্বর কম পাওয়াতে। তবে সেই স্বপ্ন থেমে থাকেনি মারুফের ২৪ সালে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা দিয়ে মারুফ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি বিষয়ে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে কৃষি বিষয়ে তার আগ্রহ কম থাকায় দুই তিন দিন ক্লাস করেই বাড়ি চলে আসেন।
এরপর এলাকায় একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করান এবং নিজেকেও ডাক্টারি পড়ার স্বপ্নে জাগ্রত করেন। তবে কোন রকম কোচিং ছাড়াই শুধু একটি কোচিং-এ নিয়মিত দুই মাস পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করেই ২০২৫ সালের এমবিবিএস পরিক্ষায় আর তাকে থামাতে হয় নি।
এবারের এমবিবিএস পরিক্ষায় মারুফ মেধা তালিকায় নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন ১৪৪৪ নাম্বারে। মারুফের এ সাফল্য দেখে বাবা মা সহ পরিবার ও আত্বীয় স্বজন থেকে এলাকাবাসী সকলেই এখন আনন্দিত। মারুফের ডাক্টারি পড়ার খবরে এখন তার বাড়িতে প্রতিদিন মানুষজন খোঁজখবর নিতে আসছেন।
মারুফের বাবা ইউসুফ আলী বলেন মাঠে হালকা কাজ করছিলাম এসময় মারুফের মোবাইল থেকে কল আসে আমার মোবাইলে। আমি ফোন রিসিভ করি তবে মারুফ আমার সাথে কথা বলতে পারেনি। সে আবেগ আপ্লুত হয়ে যায়।আমি বার বার বলি কথা বলো কিন্তু সে বলতে পারেনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।পরে তার বন্ধু ফোন টা ধরে আমাকে বলে আক্কেল মারুফ রংপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। তারপর ও আমি বলি এ কথাটা আমাকে মারুফ শুধু একবার নিজের মুখে বলুক, তখন মারুফ ফোন ধরে বলে বাবা আমার জন্য দোয়া করো আমি চান্স পেয়েছি।এ কথা শুনে আমি সাথে সাথে মাটিতে সিজদায় পড়ে যায় আল্লাহ কাছে এবং আমি কান্না করে দিয়েছি।
তবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও সঙ্কা রয়েছে আগামীতে ভর্তি হওয়া এবং পড়াশুনা চালানোর আর্থিক বিষয় নিয়ে। অসুস্থ শরির নিয়ে কিভাবে চালাবো এই পড়াশোনার খরচের টাকা।
মারুফের বড় আব্বা বলেন, মারুফ খুব ভদ্র ছেলে সে খুব মেধাবী সে অনেক পরিশ্রম করেছে। অনেক সময় সে নিজেও মাঠে কাজ করে তার পড়াশোনার খরচ বহন করেছে।
মারুফের মা মরিয়ম আক্তার ও বাবা ইউসুফ আলী, আজকের দর্পণ কে বলেন,আমার ছেলে বড় ডাক্টার হয়ে দেশের সকল গরিব মানুষেকে চিকিৎসা দিবে দেশের মানুষের সেবা দিবে দেশ কে ভালো কিছু উপহার দিবে।গরিব মানুষদের বিনা টাকায় সেবা দিবে এটাই আমাদের চাওয়া মারুফের কাছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুল হাসান বলেন, শুনেছি মারুফ নামে এক শিক্ষার্থী রংপুর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে আমি তাকে শুভকামনা জানায়। মারুফের ভর্তির জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।