রেগে বেরিয়ে গেলেন নেইমার

এক লহমাতেই বিখ্যাত হয়ে গেলেন নেলসন সেমেদো। কিছুদিন আগেই বেনফিকা থেকে বার্সেলোনায় এসেছেন পর্তুগিজ এই ডিফেন্ডার। দলবদলের সময় তাঁর নামটা খানিক আলোচনায় এসেছিল দানি আলভেসের চেয়েও ট্রান্সফার ফি’টা বেশি ছিল বলে। এর বাইরে ফুটবলার হিসেবে খুব বেশি খ্যাতি ছিল না সেমেদোর। কাল একটি ভিডিও ক্লিপের কল্যাণে গোটা বিশ্বে কোটি কোটিবার লোকে তাঁকে দেখল! কারণটা কি? শুক্রবার বার্সেলোনার অনুশীলনে নেইমারের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে সেমেদোর। এমনিতেই বিশ্বরেকর্ড ট্রান্সফার ফি’র সম্ভাবনা ও প্যারিস সেন্ত জার্মেইতে নেইমারের চলে যাওয়ার ব্যাপার-স্যাপার মিলিয়ে এই ব্রাজিলিয়ানকে ঘিরে আগ্রহটা তুঙ্গে, তখনই নেইমারের সঙ্গে অনুশীলন মাঠে লড়াইতে জড়িয়েছেন সেমেদো। ফল বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ভিডিও শেয়ারিং সাইটে এই ভিডিও দর্শক চাহিদার শীর্ষে, নেইমারের পাশাপাশি দর্শক জানছেন সেমেদোর নামটাও।

কী হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা বার্সেলোনার অনুশীলন মাঠে? ভিডিও দেখে যেটা আঁচ করা যাচ্ছে, এল ক্লাসিকো’কে সামনে রেখে ছোট মাঠে নিজেদের ভেতর দুটি দল ভাগ করে খেলছিলেন বার্সেলোনার ফুটবলাররা। হোক না ইন্টারন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নস কাপ, রিয়াল মাদ্রিদ-বার্সেলোনা মুখোমুখি হলে কি আর প্রীতি ম্যাচের আবহ থাকে! অনুশীলনটাও তাই হচ্ছিল ঘাম ঝরানো, যেখানে নেইমার আর সেমেদো ছিলেন প্রতিপক্ষ। বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় সেমেদো বাধা দেন নেইমারকে, নেইমার মাঠেই ফাউলের দাবি তোলেন। মাটিতে পড়ে যাওয়া নেইমার উঠে দাঁড়িয়ে সেমেদোর সঙ্গে কথা বলার সময়ই এই নিয়ে খানিকটা হাতাহাতি শুরু হয় দুজনের মধ্যে। এ সময় হাভিয়ের মাসচেরানো এসে নেইমারকে ধরে শান্ত করতে একদিকে টেনে নিয়ে যান আর সেমেদো হাঁটা দেন অন্যদিকে। এ সময় নেইমার তেড়ে গিয়ে আরো কিছু কথা শোনাতে চাইলে অন্য সতীর্থরা তাঁকে আটকে রাখেন। এরপর রাগে অনুশীলন ‘বিব’ খুলে ছুড়ে ফেলে দেন নেইমার, সামনে পড়া ফুটবলটাতেও বসিয়ে দেন লক্ষ্যহীন জোরালো লাথি! শুধু তা-ই নয়, মাটিতে পড়ে থাকা একটা পানির বোতলও শূন্যে ছুটেছে নেইমারের লাথি খেয়ে। তাঁর এভাবে রাগে ক্ষোভে অনুশীলন মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়ার সঙ্গে বার্সেলোনা ছেড়ে চলে যাওয়ার যোগসূত্র খুঁজছেন অনেকেই। বিশেষ করে গত কদিন ধরে বার্সেলোনার ড্রেসিংরুমে নেইমারকে থেকে যেতে সতীর্থদের অনুরোধের খবর প্রকাশ পাওয়ার পর মাঠের এ ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে, ফাটল ধরেছে সম্পর্কে।

প্যারিস সেন্ত জার্মেই যদি বার্সেলোনার বেঁধে দেওয়া ‘বাই আউট ক্লজ’ পূরণে সমর্থ হয় আর নেইমার যদি রাজি থাকেন, তাহলে দলবদলটা আটকাবে না। বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে উয়েফার ‘ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে’ নীতি। তবে উয়েফার এই দিকটা যারা খেয়াল রাখে, সেই সংস্থার প্রধান আন্দ্রেয়া ত্রাভারসো জানালেন, নিয়মের বেড়াজালে তা আটকাবে না। ২০১৪ সালে এই নীতি ভঙ্গের দায়ে ৬০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা ও চ্যাম্পিয়নস লিগ স্কোয়াড ২৫ জন থেকে কমিয়ে ২১ জনের করা হয়েছিল পিএসজির, তবে নেইমারকে কিনতে এমন কোনো শাস্তির পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই মনে করেন ত্রাভারসো, ‘পিএসজির এখন সেই বাধ্যবাধকতা আর নেই। তবে তার মানে এই নয় যে তারা যা খুশি তাই করতে পারবে। ইউরোপের বাকি ক্লাবগুলোর মতোই এই নীতিকে তাদের শ্রদ্ধা করতে হবে। তাদের দেখাতে হবে, তিন বছরে তাদের লোকসান ৩০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি হয়নি। ’ ত্রাভারসো আরো জানান, ‘নেইমারের দলবদলের প্রভাবটা কয়েক বছর ধরে বোঝা যাবে। তা ছাড়া দলবদল তো এখনো শেষ হয়নি। হয়তো কয়েকজনকে পিএসজি বিক্রিও করে দিতে পারে। ’ সব মিলিয়ে উয়েফার সবুজ বাতিও পেয়ে গেছে পিএসজি। ওদিকে নেইমারের চড়া মেজাজই হয়তো বলে দিচ্ছে, পার্ক দ্যু প্রিন্সেসে তাঁর যাওয়াটা কেবল সময়ের ব্যাপার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *