(একটি অত্যাধুনিক লুলাময়ি গল্প !!! )
কি করবো বলো, আমি তোমার কাছে কখনোই বড়, ম্যাচিউড়ড হতেই চাইনি, চেয়েছি শুধু ভীতু হতে…!!
ভীতুরা ভালবাসতে পারে অনেক সুন্দরভাবে মনের সাহসের সাথে… তাই আমি ভীতুই থেকেছি তোমার কাছে ,কখনো সাহসী হতেই চাই নাই।
ছেলেটার নাম প্রিয় মেয়ের টার নাম মেঘা।
খটকা লাগছে? প্রিয় নামটাতে?
লাগতেই পারে , প্রিয় আর মেঘার প্রেম কাহিনীতে এরকম অনেক অদ্ভুদ ব্যাপারই আছে , একটু অন্য রকমও বলে পারেন। নামের ইতিহাসটাই আগে বলি,সাস্পেন্স না রাখি।।
সাস্পেন্স খুব খারাপ জিনিস, আমার নিজেরো পছন্দের না। এই প্রিয় নামের তাৎপর্য হচ্ছে ছেলেটা যখন প্রেম পত্র দিতো তখনি তার প্রথম লেখা অক্ষর থাকতো প্রিয় মেঘা। মেঘা সেই প্রথম প্রেম পত্রটা পেয়েই ছেলেটার নাম তাঁর আম্মুর মোবাইলে প্রিয় নামে সেভ করে রেখেছিল। কিন্তু এটা ছেলেটা জেনেছিল প্রথম প্রেম পত্র দেয়ার তিন বছর পর।
যেদিন তাদের সম্পর্কের শুরু হয়েছিল সেদিনই। ছেলেটা পরে আবদার করেছিল তাকে যেন সাড়া জীবন প্রিয় বলে ডাকা হয়।
মেয়েটা তখন ক্লাস নাইনে কি টেনে পরে তাতেই সুন্দর বড় বড় চোখ, কি সুন্দর ঠোঁট, উঠতি যৌবনে মেয়েদের সুন্দরের সাথে সাথে যেমন আকর্ষণীয় লাগে ঠিক সেই সময়ে প্রথম প্রেম পত্রটা দিয়েছিল প্রিয়।
আগে থেকেই ব্যাপারটা মেঘা বুঝতে পেরেছিল বলে হয়তো ব্যাপারটাতে খুব বেশি অবাক হয়নি সে। প্রেম পত্রটা লিখার সময় প্রিয় পড়তো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষে । সাব্জেক্ট টা একটু কম দামী(?) হওয়ায় সবাইকে ম্যানেজমেন্ট বলে তৃপ্ত হতো,
এক বড় ভাইয়ের বিয়েতে প্রথম দেখা হয় মেঘা-প্রিয়র। সেখানে শুধু পরিচয়ের শুরু ছিল না সেখানেই প্রিয় ডিসিসন নিয়েছিল যে, যা হবে হবে, “ আমি এইটারে ছাড়ুম না”
যেই ভাবা সেই কাজ।। সেই বিয়ে বাড়ি থেকে ঢাকায় ফেরার পথেই ভেবে ফেলেছিল কি লিখা যায় সেই চিঠিতে।। ও হ্যাঁ, তাঁর এক বড় ভাইয়ের পরামর্শ মত সে অনেক আগেই ভেবে রেখেছিল যে , পরের কাউকে প্রোপোজ করলে প্রেম পত্র দিয়েই করবে, সেজন্য সে সেই বড় ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু টিপস নিয়েই রেখেছিল ।
সে বাসের জানালায় মাথা এলিয়ে দিয়ে ভাবতে থাকে, কি করা যায় আর কি লিখ যায়?? ভাবতে ভাবতেই বাসায় চলে আসে…
বাসায় এসে খাতা কলম নিয়ে বসে পড়ে। একে একে ২৭ টা পৃষ্ঠা ছিড়ে অবশেষে বের হয় একটা প্রেম পত্র। –
প্রিয় মেঘা,
এত সুন্দর করে কেউ নাচে?? আরেকটু হল তো কমোড় বাঁকা করে ফেলতা?? যাই হোক তোমাকে কিছু বলার দরকার ছিল তাই বলছি, মানবা কি না সেটা তোমার ব্যাপার, এতক্ষন ধরে ২৭ টা পেজ নষ্ট করেছি তোমাকে চিঠি লিখতে গিয়ে।আর পারছি না যা বলার তাই বললাম ।
“তোমার চোখ গুলা দেখলে আমার খুব ভয় লাগে, বিশেষ করে সেদিন যেভাবে শেষের দৃষ্টি টা দিলা, এই ভয়টাকেই আমি ভালোবেসে ফেলেছি । ভালো না বেসে উপায় আছে বলো? ভয়ের কারনে ঘুমের মধ্যেও ভয়ংকর রোমান্টিক লুকে তোমাকে দেখি। মাঝে মাঝে ভয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়… ভালো না বেসে উপায় কি ???
সারাদিন শুধু চুলের নিচ দিয়ে, মানে ব্রেন দিয়ে হাটাহাটি করো, তাইলে কি আমার দোষ?? বলো?? তোমার ঠোঁটের কথা না হয় আরেকদিন বলবো। আমার খুব তোমাকে ব্যাপারটা জানাতে ইচ্ছে হলো তাই লিখে ফেললাম, বাকীটা তোমার ইচ্ছা…
ভালো থাকো…”
–আমি –
এই রকম একটা কাঠ খোট্টা টাইপ লাভ লেটারর পেয়ে মেয়েটা হাসবে নাকি বান্ধবীদের কাছে গল্প করবে। সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না । ও হ্যাঁ, প্রেম পত্রের শেষে ছেলেটার ফোন নাম্বার দেয়া ছিল। মেয়েটা সেদিনই সেটা প্রিয় নামে সেভ করেছিল আম্মুর মোবাইলে। কেন সেই নামে সেভ করেছিল সে উত্তর সে কখণোই দিতে পারে না। এমন অনেক কাজ মানুষ করে যেগুলোর ব্যাখা তাঁর নিজের কাছেও থাকে না। মেঘার ও তাই হয়েছিল এবিষয়ে । তবে ফাইনালি মেঘা তাঁর মুখ ফুটে হ্যাঁ বলেছিল কলেজের শেষের দিকে, এতদিন ছেলেটা শুধু প্রেম পত্র দিয়েই গেছে, প্রেম পত্রের রিপ্লে আর পায় নি।
১৪ ডিসেম্বর ছিল
মেঘা প্রথম বারের মত চিঠি লিখতে বসেছিল, মোবাইলের ম্যাসেজের রাইটিং ওপশনে ।। ইয়া বড় একটা ম্যাসেজ লিখে ফেলেছিল সেদিন।।
বাংলিশ ভাষায় লেখা ম্যাসেজটার মূল কথা ছিল, “আমি আপনাকে পছন্দ করি, অনেক দিন থেকেই, হয়তো প্রথম দেখার দিন থেকেই, তাই,অন্য মেয়ের সাথে সেলফি তুলে ফেসবুকে দিবেন না, আমার কষ্ট হয়। বাই বাই… “
যখন এই ম্যাসেজটার টার টোন টা প্রিয়র মোবাইলে বেজে ওঠে তখন সে ছিল গভীর ঘুমে…
সকালে উঠে যখন ম্যাসেজটা দেখে যতটা না অবাক হয় নি তাঁর থেকে বেশি অবাক হয়েছে একটু পরে। যখন সে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ফোন দিয়েছে…
১ বার ফোন দিতেই ওপাশ থেকে “হ্যালো শব্দ…!!!” সকাল ৭ টা … মেঘা বলে, কি বলবেন তা আমি জানি…!! যা দেখছেন সত্য দেখছেন, আপনার ফোন আসবে দেখেই এখনো টেবিলেই বসে আছি… শুইলেই কেমন জানি পিপড়া কাওড় দিচ্ছে, ঘুমোতেই দিচ্ছে না…
-কি বলো?? ছেলেটা অপাশ থেকে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে… !!
– আবিদের বন্ধুদের ধারনা ছিল সেদিন মেঘা আবিদকে (প্রিয়কে) হ্যাঁ বলে দিয়েছিল অনেকটা জেলাসি থেকে, মেয়েমানুষের সব থেকে কঠিন রোগ এটা, যখনি কোন পছন্দের ছেলের সাথে অন্য আরেকটা মেয়েকে দেখে ,তখনি তাদের মাথার কালো চুলের নিচের মগজটা কিল বিল-কিলবিল করে।
এর আগে পর্যন্ত তাদের অনুভুতিটা অনেক কম কাজ করে।
আবিদ ব্যাপার টা বুঝেই এক্সপেরিমেন্টাল চালাতে গিয়েই সফল। অফিসের সুন্দরী এক বড় আপুর সাথে একটু রোমান্টীক লুকে ছবি দেয়াতেই ফাইনাল ঢাক্কাটা মেঘা খেয়েছে, আবিদের তাই বিশ্বাস।
অবশ্য আবিদ বুঝতো মেঘা তাঁর প্রতি অনেক আগে থেকেই দুর্বল হয়েছিল, শুধু মুখ ফুটে বলতে পারতো না, এই যা…
সেদিনের পর তাদের প্রথম দেখা হয় আরো তিন দিন পরে।
মেঘার বাড়ীর পাশে এক পুকুর ঘাটে। তাদের প্রথম দৃষ্টি বিনিময়টা ছিল খুবই দৃষ্টি কটু। সাধারনত প্রথম দেখায় সবাই লজ্জা লজ্জা মুখে হাসি হাসি ভাষায় কথা বলে, কিন্তু সেদিন হয়েছিল উল্টো…
আবিদ একটু খিটখিটে মেজাজের হওয়ায় ২ ঘন্টা দেরী সহ্য করতে পারে নি… বড় বড় চোখ করে বলেছিল, ; তুমি এত অলস কেন? ফোনটাও ঠিক মত ধরো না!!?”
মেঘা প্রথম সামনা সামনি কথাতেই বলেছিল , এই জন্যই আপনার এত দিনেও একটা প্রেম হয় নাই, দুই ঘন্টা সহ্য করতে পারেন না?? সারাজীবন সহ্য করবেন কিভাবে?? “
অবস্থা শান্ত করার জন্য আবিদ চুপ করে মেনে যায় সব কথাই… এর পর কিছুক্ষন নিরবতা পালনের পর মেঘা বলে উঠে… “ এরকম ক্ষ্যাত মার্কা লাল শার্ট পড়ে আসছেন কেন??”
-কয়েকদিন আগে কিনেছি…খারাপ লাগছে খুব???
লাল শার্ট কাকে মানায় জানেন?
-কাকে?
দুধের কালারে বড় লোকের ধনির ব্রয়লার মুরগীগুলোকে ।
কথাটা বলতেই হেসে ফেলে আবিদ , বলে, আমি তো বড়লোকের ব্রয়লার নই, আমি তো খেটে খাওয়া মানুষ…!!
-সেজন্যই তো বললাম, আপনার মত গারো শ্যামলা খেটে খাওয়া মানুষকে লাল শার্ট কিনার বুদ্ধি কে দিয়েছে??
আমাকে লাল খুব খারাপ লাগছে???
-খুব না, তবে কেন জানি ম্যাচ করছে না। ভিতরে আবার মগার মত টী শার্টও পরছেন…
শার্ট খুলে ফেলবো?? ভীতরের টিশার্ট টা অন্য কালারের…
-না থাক, সালমান খান হইতে হবে না। কিছু খাবেন? নাকি ক্ষুধা লাগে না??
হ্যাঁ, চলো পাশেই একটা ভালো খাবারের দোকান আছে…।
-চলেন।।
শুরুটা একটু কম খারাপ হওয়ার পরেও তারা সুখে শান্তিতেই সুস্থ থাকা শুরু করেছিল । মানে তাদের প্রেম ভালোই চলছিল কিন্তু বাগরা দিয়েছিল সমাজ।
এই আধুনিক যুগে ছেলে মেয়ে দুজনই প্রগতীশীল ছিল কিন্তু তাদের পরিবার ছিল ধর্ম ভীরু কাপুরুষ ধাঁচের। মেঘা আর আবিদের বিয়ে হবে ,তাদের ভালোবাসা দিয়ে আরেকটি নতুন যুগের সুচনা হবে সেটা চায় নি এই সমাজ। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে তাদের তিন বছরের ভালো লাগা ,প্রায় এক বছরের প্রেম পুরোটাই এক বাক্যে অস্বীকার করেছিল আবিদের পরিবার ।
আর মেঘার পরিবার তো খাটি আদি ব্রাম্মন পরিবার,তারা ব্যাপারটা সেভাবে জানতেই পারেনি ,আর পুরোটা নাকি জেনেছিল অনেক পরে।
ব্যাপারটা সব দিকে জানাজানির পর পাল্টাতে থাকে আবিদ আর মেঘার রঙ্গিন সময়,রঙ্গিন সবপ্নগুলোকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ধুসর রংটা…
আবিদের পরিবার থেকে সমাধান হিসেবে আবিদকে অনেকটা জোর করেই দেশের বাইরে তার বড় ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয় তার কট্টরপন্থী আলেম বুজুর্গ বাবা …
কিছু ছেলেমানুষী আবেগও হার মানাতে পারে নি আবিদের পরিবার কে…আবিদ ও হেরে গিয়েছিল নিজের কাছেই।
আবিদ চলে যাওয়ার আগে অনেক ঘটনার শেষ ঘটনা ছিল ছিল মেঘার চিঠি… যে চিঠি আদৌ আবিদের কাছে পৌঁছেছিল কিনা সেটা নিয়ে মেঘা সন্দিহান।।
যেটার নাম মেঘা দিয়েছিল “শেষ চিঠি…। যদিও সেটা শেষ চিঠি ছিল কিনা সেটা মেঘা এখনো বলেনি।
চিঠিটাঃ
“ প্রিয় আবিদ,
আসলে আমি ম্যাচিউরড হয়েছি কিন্তু ভীতর থেকে বড় হইনি,
আমি যতটা পজেটীভ নিজেকে চিন্তা করি আমি ততটা না, কারন পজেটিভ ভাবতে গেলে সাহস লাগে, আমি অনেক ভীতু।
আসলে ,আবেগকে কখনো প্রশ্রয় দিতে না চাইলেও আবেগ আমাকে ছাড়ে না।
কি করবো বলো, আমি তোমার কাছে কখনোই বড়, ম্যাচিউড়ড হতেই চাইনি, চেয়েছি শুধু ভীতু হতে…!!
ভীতুরা ভালবাসতে পারে অনেক সুন্দরভাবে মনের সাহসের সাথে… তাই আমি ভীতুই থেকেছি তোমার কাছে ,কখনো সাহসী হতেই চাই নাই।
আজও ভীতু হয়েই শেষ চিঠিটা লিখতে বসলাম।
“অধিকার, আর সম্মান কর্তব্য,সীমাহীন বিশ্বাস “ হলেই একটা সম্পর্কের খুব সুন্দর পরিনতী হয়ে যায়। আসলে, আমাদের সম্পর্কে সবই ছিল, শুধু ছিল না অধিকার আর কর্তব্যটা।”
কেন ছিল না কিংবা কেন কম কম ছিল, সেটা আমরা দুজনই শুরুর আগে থেকেই জানি এবং জেনেই সব সময় না জানার ভান করে করে থেকেছি। এই জন্য মাঝে মাঝে নিজেকে অপরাধী ভাবলেও ,
পরক্ষনেই আবার ভাবি, এসব না হলে, কিভাবে বুঝতাম?? প্রেমের আরেকটা অদ্ভুদ ব্যাপারও আছে।
আরেকটা মানুষকে এরকম ভাবে ফিল করা এটা শুধু আকর্ষণের কারনে কখনই হতে পারে না।
ভালোবাসা ছাড়া আরেকটা মানুষকে এভাবে স্বপ্নে দেখাও যায় না হাজার চেষ্টা করেও…
যাই হোক,
ভালোবাসাতে কোন অপরাধ নেই, না পাওয়াতেও কোন অপরাধ নেই,
অপরাধ শুধু বিশ্বাস ভাঙ্গাতে…!! কথা দিলাম, বিশ্বাস ভাংবো না… ফিরে আসলে জানিও, একসাথে লাঞ্চটা বাকী থেকে গেল…
–আমি
.
.
.
ছবিঃ প্রতিকী ।
(যারা লাল শার্ট নামের যথার্থতা খুজছেন, তাদের উদ্দ্যেশ্যে এই গল্পের বাকী পর্ব গুলো আগে ভাগেই ডেডিকেট করে রাখলাম আর হ্যাঁ, লেখার কোন অংশ, পুরো অংশ ;শেয়ার ,কপি পেস্ট কিংবা আংশিক কপিপেস্ট কোন অপরাধ বলে গন্য হবে না, বড়রা বলেন, প্রচারেই প্রসার