পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সংবাদকর্মীদের ওপর হামলাকারী হেলমেট সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামারও ঘোষণা দেয় সাংবাদিক সংগঠনগুলো। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন,আমরা সংবাদকর্মীর নেতারা।
সমাবেশে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাবান মাহমুদ বলেন, দিনের পর দিন সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার। গণমাধ্যমের উপর এমন বর্বোরোচিত হামলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সরকারের উচিত সাংবাদিকদের উপর হামলাকারীদের আইনের আওতায় এনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদাণ করা। পেশাজীবীদের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সাংবাদিকরা বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে। ঐক্যের মাধ্যমে সব বাধা প্রতিরোধ করতে হবে।
বিএফইউজের সহসভাপতি এবং জিটিভি ও সারাবাংলা ডটনেটের এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, প্রতি মুহূর্তে হাজারও চাপ এবং বিপদ উপেক্ষা করে সত্য সংবাদ সংগ্রহ ও তা প্রকাশের দায়িত্ব সাংবাদিকদের।সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেওয়া এবং হামলা করার মাধ্যমে সত্য নয়, গুজবের পথ প্রশস্ত হচ্ছে। সব ধরনের রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারীদের সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের মাধ্যমে সত্য প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।এটি কাম্য নয়।
বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল বলেন, পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের বেছে হামলা চালায় কিছু দুর্বৃত্ত।হামলাকারীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখে দাঁড় করাতে হবে সরকারকেই।
মানববন্ধনে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকরা বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছেন। জঘন্য এ হামলার সমস্ত ভিডিও ফুটেজ আছে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।এসব ফুটেজ দেখে হামলাকালীদের বের করা সম্ভব। সরকারকে দ্রুত আন্তরিকভাবে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সক্রিয় হতে নির্দেশ দেওয়া উচিত।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, পোশাদার সাংবাদিকরা যদি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো বাধার মুখে পড়েন, তবে তার পাশে সর্বোতভাবে থাকবে সাংবাদিক সমাজ। তবে কেউ যদি সাংবাদিক পরিচয় ব্যবহার করে বা সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে গুজব ছড়ায়, অপসাংবাদিকতা করে, তাদেরও সাংবাদিক সমাজ রুখে দেবে।
বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ দীপ আজাদ বলেন, প্রশাসন উসকানিদাতার পরিচয় প্রকাশ করতে পারছে, কিন্তু সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের ফুটেজ তারা গণমাধ্যমের কাছে চাইছে। প্রশাসনের ইচ্ছা থাকলে তাদের কাছে যে ফুটেজ আছে, তাই দিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে পারবে।দুঃখের বিষয়, সাংবাদিকরা আহত হওয়ার পর তিন দিন পেরিয়ে গেলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা তথ্যমন্ত্রী- কেউই সাংবাদিকদের দেখতে হাসপাতালে গেলেন না বলে জানান তিনি।
বাংলাভিশনের স্টাফ রির্পোটার এস এম ফয়েজ বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হামলা। হেলমেট সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের জোর দাবিও জানান তিনি। অন্যথায় অবস্থানসহ আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। একই সাথে সাংবাদিকরা যাতে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করতে পারে সে পরিবেশ নিশ্চিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান সাংবাদিক এস এম ফয়েজ।
এর আগে সকালে, কর্মরত সাংবাদিকদের উপর হেলমেটধারীদের আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার আল্টিমেটাম দিয়েছে সাংবাদিক সমাজ। মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার সার্ক ফোয়ারায় ১০ মিনিট মানববন্ধন ও প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেন সাংবাদিকরা।
এ সময় ক্রাইম রিপোর্টাস এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি পারভেজ খান বলেন, সরকারের সদ ইচ্ছার অভাব আছে। হামলাকারী সবাই চিহ্নিত হয়েছে। সরকার আন্তরিক হলে হামলাকারীরা আইনের আওতায় আসবে। তিনি বলেন, বিগত দিনে সাংবাদিকদের আন্দোলন থেকে এবারের আন্দোলন ভিন্ন।কোন দলীয় সাংবাদিক পক্ষ আন্দোলন করছে না।
অন্যদিকে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থী আন্দোলনে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। মঙ্গলবার জাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি নুর আলম হিমেল ও সাধারণ সম্পাদক নিলয় মামুন এক যৌথ বিবৃতিতে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।