হতদরিদ্র উদ্ভব চান্স পেয়েছেন ঢাবিতে,অর্থাভাবে ভর্তি নিয়ে আশঙ্কা!

নাজমুল হাসান সাগর: এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি কোনটিতেই জি.পি.এ-৫ নেই কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে তাকে পড়তেই হবে।এটা স্বপ্ন নয় জেদ।এমনটাই বলছিলেন উদ্ভব। অবশেষে মোট ৮.৯০ জিপিএ নিয়ে উদ্ভব খ ইউনিটে ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং মেধা তালিকায় ক্রমানুসারে ২১১৩ তম স্থান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।সে থেকেই বোঝা যায় উদ্ভবের মেধা,পরিশ্রম আর ইচ্ছা শক্তির জোর কতটুকু ছিলো।

এত মেধাবি হয়েও উদ্ভব কেনো এস.এস.সি ও এইচ.এস.সি তে জিপিএ – ৫ পেলো না সেটা প্রশ্ন করা হয়েছিলো তাকে।উত্তরে উদ্ভব বলেন,”আমাদের পরিবারের অর্থনৈতীক অবস্থা খুবই নাজুক। এক দিন আমরা বাবা-ছেলে কাজ না করলে বাড়িতে খাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে আগে কাজ আর পরে পড়া শোনাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আমার রেজাল্ট এমন হয়েছে”।

কথার সত্যতা পেতে খুব বেগ পেতে হয় নাই।কারন উদ্ভবের সাথে কথা হচ্ছিলো তার বাড়িতে বসেই। বীরগঞ্জ থানার শতগ্রাম ইউনিয়নে শতগ্রামের পাল পাড়াতেই তার বাড়ি।সে সময় পূজা চলছিলো এবং নবমির দিন কিন্তু উদ্ভবের বাড়িতে পূজার কোন আমেজ নেই।জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার বাবাকে তো দেখছি না? উনি কই? উদ্ভব কিছু ক্ষণ চুপ থেকে মাথাটা নিচু করে ধিরে ধিরে বলতে থাকেন,আমাদের সম্প্রদায়ের চিরাচরিত পেশা মৃৎ শিল্প, আমার বাবা পেশায় এক জন মৃৎ শিপ্লি সোজা কথায় আমরা যাকে বলি কুমার।উনি আজকের দিনেও মাটির হাড়ি-পাতিল,খেলনা ও অন্যান্য তৈজসপত্র নিয়ে গ্রামে গেছেন ফেরি করতে।কিছু দিন পরেই আমাকে ঢাবি তে ভর্তি হতে হবে কিন্তু এখন পর্যন্ত টাকা যোগার হয় নাই।সর্ব সাকুল্যে যা আছে আমাদের,,,সেটা পাঁচ হাজারের কম ছাড়া বেশি হবে না।হাতে সময় কম তাই বাবা বসে না থেকে দোকান নিয়ে গেছেন এই পুজার মধ্যেই। যা আয় হবে সেটাই এগিয়ে যাবে তার ভর্তির টাকার জমানো অংকে।

উদ্ভবের কথা শেষ না হতেই উদ্ভবের মা শ্রীমতি বলতে শুরু করেন।এই পূজায় আমার তিন সন্তানের এক জনকেও একটা নতুন কাপর কিনে দিতে তো পারিই নাই ওদের হাতেও একটা টাকা পর্যন্ত দেই নাই।উদ্ভবের মা যা বলেছেন তার সারমর্ম হচ্ছে এমন,শুধু মাত্র খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে এই অভাবের সংসারে যা আয় হচ্ছে তার সবটুকুই সঞ্চয় করা হচ্ছে বড় ছেলের ভর্তির ফিস ভরার জন্যে।তাই বাড়িতে কোন পুজার আমেজ নেই।

এমন পরিস্থিতে কি করার আছে? প্রশ্ন করে উদ্ভব। তারপর উত্তরের অপেক্ষা না করে নিজেই বলতে থাকেন আমার পড়া লেখা চালিয়ে যেতে আমাকে সব থেকে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন আমার বাবা (লেবু পাল)। তিনিই সব ব্যাবস্থা করবেন,ভগবান যদি সহায় থাকেন।

কি ধরনের প্রেরণা পায় উদ্ভব তার বাবার থেকে সেটা বলতে গিয়ে উদ্ভব একদিনের একটা ঘটনা বলেন।ঘটনাটা তার ভাষায় এমন, ম্যাট্রিক পরীক্ষার আগের সময়টায় এক দিকে পড়া শোনার চাপ নিতে হচ্ছে। না হলে রেজাল্ট খারাপ হবে অন্য দিকে কাজ না করলে বাড়িতে অনাহারে থাকতে হবে।আমি গেছিলাম ধান ক্ষেতে কাজ করতে।যা আয় হবে সেটা দিয়ে বাড়িতে খাবার কেনা হবে এই ভেবে।কাজে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে দেখি আমার বাবা আমাকে লাঠি হাতে মারতে গেছে।খুব রাগ নিয়ে আমাকে বলছিলেন,”পড়া বাদ দিয়া তোক ক্যায় কাম করিবা আসিবার কহিছে?খুউব দেউনিয়া হয়া গেইছিস না কি?যা বাড়ি যা! বই ধরি বইস।”

এমন বাবার অনুপ্রেরণা পাওয়া উদ্ভব পাল কি তার জেদ ও কাংখিত লক্ষ্য থেকে বিচ্চুত হতে পারে?শত বাধা পেড়িয়ে উদ্ভব এত দূর এসেছেন ভর্তিও হতে পারবে বলে বিশ্বাস করেন।কথা শেষে ফিরে আসবার সময় উদ্ভবের মা বললেন,”দেখেন বায় তোমরা,মোর ছাওয়াটা যেন ভর্তি হবার পারে।” এই আকুতি শোনার পরে তাকে বলা হয় নাই, আপনার এই আকুতি মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া ছাড়া আমার তেমন কিছু করার নেই।

আমরা বিশ্বাস করি আপনার এই আকুতি কারোও না কারোও হৃদয়ে নাড়া দেবে।সে আসবে সহযোগীতার হাত নিয়ে।আগামী ২৯-১০-১৭ তারিখে উদ্ভবের ভর্তির শেষ দিন।যারা সহযোগীতা করতে চান তারা 01786-959615 এই নাম্বারে যোগাযোগ করুণ সরাসরি উদ্ভবের সাথে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *