উত্তরের বন্যায় সার্বিক ক্ষয় ক্ষতির প্রভাব ও প্রধানমন্ত্রী আর যোগাযোগ মন্ত্রীর দিনাজপুর সফর

#নাজমুল হাসান সাগর

টিভির খবর অনুযায়ী এবারের বন্যায় এখন পর্যন্ত শুধু ফসলই নষ্ট হয়েছে দেড় লাখ হেক্টর । এখন পর্যন্ত বললাম কারন, আরোও বড় ধরনের বন্যা হবার সম্ভাবনা আছে সামনে সে জন্যে । বন্যা যদি আবার আঘাত হানে তাহলে ফসলের ক্ষতি আরোও বেশি হবে।প্রতিকুলতা কাটিয়ে যেসব ফসল হবার সম্ভাবনা ছিলো সেগুলো নষ্ট তো হবেই তার সাথে কিছু ফসল আছে যেগুলো পুণর্বপনের সুযোগ থাকে। সেগুলো পুনর্বপন করতে পারবে না অনেক সামর্থ্যবান কিষাণেরা।বন্যা আবার আঘাত হানলে ফসল পুণর্বপনের কাজটা হবে না মুলত সময়ের অভাবে।

কৃষি প্রধান উত্তরবঙ্গতে সামনের দিনগুলোতে ফসলের এই ক্ষতি যে কি ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে সেটা হিসেব কোষে অনুমান করতে হবে বলে মনে হয় না। এখানে জীবিকার জন্যে আর দ্বিতীয় কোন পথ নেই বললেই চলে।যারা চাকুরি করে সরকারি বা বেসরকারি, তাদের সংসারও অর্ধেক কৃষি নির্ভর।অন্যান্য ক্ষয় ক্ষতির হিসেব কষা এখনো বাকি।

বন্যায় যে সব বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো পুনরায় নির্মান করতে হবে। এখানে একটা বিষয় লক্ষনীয় যে, বন্যায় যে সব পরিবারের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে বা ভেসে গেছে তাদের অর্থনৈতীক সামর্থ্য সামাজিকতার কাঠামতে শুন্য। তাদের এই বাড়ি ঘর পুন: নির্মাণ করার সানর্থ্য নেই।দিন এনে দিন খাওয়া এই মানুষগুলোর বন্যার সময় ও বন্যা পরবর্তি সময়ে জীবিকা নির্বাহের জন্যে থাকবে না কোন কাজ।হঠাৎ আঘাত হানা এই বন্যায় ছিলো না কোন পুর্ব প্রস্তুতি । হাতে ছিলো না কোন জমানো টাকা ।তাই বন্যা পরবর্তি পরিস্থিতি কাটিয়ে ঘুড়ে দাড়ানো তাদের পক্ষে অসম্ভব! এই সব মানুষগুলোকে যদি বাসস্থান ও কর্মসহ পুণর্বাসনের ব্যাবস্থা না করা হয় তবে এটার প্রভাব হবে চরম ভয়াবহ। এই মানুষগুলো বাস্তু ও কর্মহীন হবে, দিশেহারা হয়ে কি মানবেতর জীবণ যাপন করবে ভাবা যায়?

এক সময় তল্পি তল্পা ঘুটিয়ে এই মানুষগুলো ঢাকা শহরে পারি জমাবে জীবিকার সন্ধানে পরিবারসহ। এর ফলে ঢাকা কিংবা তার আশে পাসের শহরগুলোতে বাড়বে মানুষের চাপ। রাজধানী কেন্দ্রিক জীবন যাপন হবে আরোও অসহ্য। কারন সেখানেও বাসস্থান আর কাজের নিশ্চয়তা নেই বললেই চলে। রাজধানীবাসি ও রাজধানীতে পারি দেওয়া নতুন মানুষগুলোর জন্যে বিষয়টা গিয়ে দাড়াবে গোদের উপর বিষ ফোড়ার মতো!

এবার আসি উত্তরের মাছ চাষিদের প্রসঙ্গে।বণ্যার কোন রকম পুর্ব প্রস্তুতি না থাকায় এই মাছ চাষিরা তাদের সব কিছুই ক্ষুইয়েছেন বন্যার পানির স্রোতের সাথেই। কি পরিমান মাছ সব পুকুর ও হ্যাচারি থেকে বের হয়েছে সেটা নদীর মাছ দেখলেই বোঝা যায়। জেলেরা নদীতে দিনে সর্ব নিম্ন পাচ মন আর উর্ধে বিশ মন করে মাছ শিকার করছে এখন।এমন মাছবতি নদী উত্তর বঙ্গে কল্পনাতীত। বেশি বেশি মাছ এখন পাওয়া গেলেও আগামীতে দেখা দেবে মাছের সংকট।ফলে দাম বেড়ে যাবে সেই সাথে ক্রয় ক্ষমতা হারাবে সাধারন মানুষ। এতে করে মানুষের শরীরে আমিষের ঘাটতি দেখা দেবে, অসুখ-বিসুখ বাড়বে।

কোথাও কোথাও বন্যার পানি নেমে যাবার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে ডাইরিয়া, ভাইরাস জনিত জ্বরসহ বিভিন্ন পানি ও মশা বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। বিষেশ করে নিম্নবিত্ত লোকেদের জন্যে এই অসুখ-বিসুখ মোকাবেলা করা সম্ভব হচ্ছে না চিকিৎসার অভাবে। এই সমস্যা দ্রুত মোকাবেলা করতে না পারলে স্বাস্থ্যহানি ও কর্ম ক্ষমতা হারাবে এই মানুষগুলো।

সরাসরি নদীর পানির তীব্র স্রোত প্রবাহিত হয়েছে প্রায় সব ধরনের স্থানীয় ও হাই ওয়ে সরকগুলোর উপর দিয়ে।প্রবাহিত স্রোতের তীব্রতায় ভেঙ্গে গেছে অধিকাংশ রাস্তা। এতে স্থানীয় ও ঢাকা কেন্দ্রীক যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে চরম ভাবে। ঢাকার সাথে দ্রুত স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যাবস্থা পুন:স্থাপন না করতে পারলে অর্থনৈতীক ও অবকাঠামোগত ভিত্তি দুর্বল হতে শুরু করবে বন্যাকবলিত এলাকাসমুহের।

তুমুল বন্যায় ভেঙ্গেছে ছোট ছোট ব্রীজ, কালভার্ট থেকে শুরু করে বড় বড় নদী কেন্দ্রীক যোগাযোগ ব্যাবস্থা। ভুরুঙ্গামারি নাগেশ্বরী এলাকায় বন্যার শুরু থেকেই বিদ্যুৎ নেই। আসবে না আগামী এক মাস।কোন এক নদীর তলদেশ দিয়ে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া হয়েছিলো সেটা বিদ্ধস্থ হওয়ায় এই বিপর্যয়। যে ব্যাবস্থায় এই সংযোগ নেওয়া হয়েছে সেটা মেরামত করতে বিদেশী সহায়তা লাগবে। এই বিদেশি সাহায্য যতদিন না আসছে ততদিন ঐ এলাকার মানুষ থাকবে অন্ধকারে।

বিদ্যুৎ নেই, অপ্রতুল আশ্রয় কেন্দ্র, নেই প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাবস্থা। মানুষ পরিবারসহ আশ্রয় নিয়েছে রাস্তা ঘাটে। ত্রাণের খাবার এলে খাবার খায় না হলে বউ বাচ্চা নিয়ে রাস্তাতেই দিন-রাত কাটিয়ে দিচ্ছে বানভাসি মানুষ। যোগাযোগ ব্যাবস্থা থেমে যাওয়ায় নিত্য ব্যাবহার্য্য জিনিসের আমদানী বন্ধ হয়ে গেছে।ঐ সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। একটি কয়েল কিনতে বানভাসি অসহায় মানুষদের ব্যায় করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা! পেয়াজ, মরিচ কিংবা শাক সবজির দাম বেড়েছে ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুন থেকে তিন গুন!

এরকম আরোও অনেক সমস্যা আছে যা আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে কিংবা এখন পর্যন্ত নির্ণয় করা সম্ভব হয় নাই। সব মিলিয়ে এবারের বন্যা যেন আমাদের দুর্ভিক্ষের দিকে ধাপিত না করে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।ঘুরে দাড়াবার বিকল্প রাস্তা বের করতে হবে নিজেদের রক্ষার দাগিতে।

খুব ভালো খবর এটা যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগ মন্ত্রী দিনাজপুরে আসবেন বানভাসি মানুষদের দেখতে, বন্যা পরিস্থিতি দেখতে। তাদের যেন সার্বিক বিষয়ে অয়াকিবহাল করা হয়। দেশের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ বাক্তির সফরটা যেনো শেষ পর্যন্ত শুধু নির্বাচনি সফর না হয়ে যায় সেই প্রত্যাশা সাধারন মানুষ করতেই পারে। প্রধানমন্ত্রী ও যোগাযোগ মন্ত্রী যেন এখানকার পরিস্থিতি বুঝে উপযোগী ব্যাবস্থা গ্রহণ করেন এটা আশা বা প্রত্যাশা নয় এটা দরকার।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *