ভাই ফোঁটা বাঙালীর জীবনের অন্যতম বড় উৎসবমুখর পার্বণ। এ উৎসবটি বাংলা ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে পালিত হয় বিভিন্ন নামে। ভাই-বোনের সম্পর্কের এমন স্নিগ্ধ অমলিন উৎসব ভারতবর্ষ ছাড়া বোধহয় পৃথিবীর আর কোথাও হয় না। ছোটবেলা থেকে অশীতি বৃদ্ধকাল পর্যন্ত সকল বয়সের সবাই ভাইফোঁটার এই উৎসবে উদীপ্ত, উজ্জীবিত হয়। জানিনা মহাকালের কোন পবিত্র ক্ষণে বাংলার কোন এক লোককবির হৃদয়ে প্রতিভাসিত হয়েছিলো ভাইফোঁটার এ ছড়াটি। এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, যতকাল বাঙালী থাকবে ততকালই অমর হয়ে থাকবে এই ছড়াটি। তবে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন পাঠান্তর আছে ছড়াটির।
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা,
যমের দুয়ারে পড়লো কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা,
আমরা দেই আমার ভাইকে ফোঁটা।
আগ বাজে, শাখ বাজে, আরো বাজে কাড়া,
আজ হতে ভাই তুমি না যাইয়ো যমপাড়া।
বোনেরা যমের হাত থেকে ভাইকে রক্ষার শুভকামনার সাথে সাথেই ভাইকেও আমৃত্যু দায়িত্ব নিতে হয় বোনের আত্মশ্লাঘাবোধ এবং সম্ভ্রম রক্ষার। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় যে বর্তমানে আমরা কয়জন ভাইয়েরা আমাদের বোনদের সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারছি?
না পারছি না। যদি পেরেই থাকি তবে পূজার মতো অসংখ্য পূজার জীবন এমন হতো না।
যখন অসুরেরা, পিশাচেরা আমাদের মা-বোনেদের সম্ভ্রমহানি করতে আসে, তখন আমরা ভাইয়েরা কি পারি না, ঘরে আর কিছুই না থাক অন্ততপক্ষে দাঁ তো আছে সবার ঘরে, সেই দাঁ দিয়েই নরপশু-নরপিশাচদের দুইহাত কেটে রেখে দিতে ; পরে না হয় জেল-জরিমানা যা কিছুই হয় হোক। আজ আমাদের দেশে অসংখ্য বোনেরা প্রতিদিন লাঞ্ছিত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে ; তো সেই
বোনেদের হাতে কপালে ফোঁটা নেয়া ভাইয়েরা সব কোথায়?
আশেপাশের প্রতিবেসের দিকে তাকালে মনে হয় ভাইয়েরা সবাই আমরা আত্মকেন্দ্রিক কালনিদ্রায় মগ্ন। জানিনা এ কালনিদ্রা কবে ভাঙ্গবে?
সবাইকে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার শুভেচ্ছা!