নাজমুল হাসান সাগর | উত্তরের জেলা দিনাজপুর, ধান এখানকার অন্যতম প্রধান ফসল । জমির ক্ষেত্র ভেদে এই অঞ্চলে কিছু জমিতে শুধু ধানই চাষ হয়। বাদবাকি আবাদি জমিতে ধানসহ অন্যান্য ফসল চাষ হয় মৌসুম অনুযায়ী। ধানের পাশা পাশি এই জমিগুলোতে ভুট্টা, করল্লা, শসা, বেগুনসহ বেশ কিছু সবজি জাতীয় ফসল চাষ করে এই অঞ্চলের চাষিরা।
গেলো বন্যায় ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায়, বন্যা পরবর্তি সময়ে চাষিরা ধানের পাশা পাশি নানা ধরনের শাক সবজি চাষ করেন ব্যাপক হারে। এর মধ্যে বেগুন, লাউ, মুলা অন্যতম। সব থেকে আশার ব্যাপার হলো, সবজি চাষে ঝুকছে শিক্ষিত বেকার ছেলেরাও। দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার ছিট ভগীর পাড়া’র মাস্টার্স পাস আল মামুন,বেকার বসে না থেকে কিছু করার চিন্তা থেকেই বাড়ির পেছনে পরে থাকা পতিত জমিটায় কিছু একটা চাষাবাদ করে নিজেকে ব্যাস্ত রাখার উদ্দেশ্যে বেগুন চাষ করবেন বলে মনস্থির করেন।
ভাবনা অনুযায়ী, জমি প্রস্তুত করে, চারা কিনে রোপন করে যথাযত ভাবে চাষাবাদে মননিবেশ করেন মামুন। কিছু দিন পরেই বন্যায় সব কিছু নষ্ট করে দিয়ে যায়। হাল না ছেরে আবার চারা কিনে চাষাবাদ শুরু করেন।যথা সময়ে ফলনও হয়েছে প্রচুর, দামও পাচ্ছেন চাহিদামতো। ভালো ফলন আর দাম পেয়ে শীতের মৌসুমী অন্যান্য সবজি চাষেও মন নিবেশ করবেন বলে জানান মামুন।
একই গ্রামের শিক্ষিত ও বেকার যুবক আলম অল্প ক্ষানিক জমিতে একই সাথে চাষ করেছেন লাউ ও বেগুনের।লাউয়ের ফলন প্রচুর এবং নোমলা (যে বেগুন দেরিতে চাষ করা হয়) বেগুন হওয়ায় এখনো ফলন আসে নাই বলে জনান আলম। বেগুনের ফলনও ভালো হবে বলে আশাবাদি আলম।
তিনি আরোও জানান, প্রথম প্রথম খুব বেশি লাউ তোলা না গেলেও এখন পর্যন্ত যতগুলো লাউ উঠানো হয়েছে জমি থেকে সেগুলোর প্রত্যেকটি প্রায় পঁচিশ থেকে ত্রিশ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছে।এভাবে অল্প কিছু দিনও যদি এমন দাম পাই তাহলে আমার খরচের টাকা উঠে যাবে অনায়েশেই।
শুধু শিক্ষিত বেকার না, এই অঞ্চলের নিয়মিত চাষিরাও এবার সবজি চাষে ব্যাপক ফলন ও দাম পেয়েছেন। শেষ সময়ে এসে গত দিনের বৃষ্টিতে পাকা ধানের যে ক্ষতিটা হয়েছে সেই ক্ষতির অর্থনৈতীক প্রভাব কিছুটা হলেও লাঘব হবে সবজি চাষের মাধ্যমে। এমনটা মনে করছেন অনেক নিয়মিত ও প্রবীণ চাষিরা।
বন্যার ক্ষতি থেকে নিজেদের উদ্ধার করতে আর বেকারত্ব থেকে নিজেদের বাঁচাতে ধানের পাশা পাশি সবজি চাষ হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এক্ষেত্রে নিয়মিত চাষিদের সাথে শিক্ষিত বেকারদের উৎসাহিত করা যেতে পারে সবজি চাষে। এই অঞ্চলের কৃষিনির্ভর অর্থনিতিকে চাঙ্গা রাখতে এমন উদ্যোগ খুবই ফলপ্রসু হবে বলে আশা করা যায়।