বাঁশি, গীতিকাব্য, সুর, কণ্ঠসহ সংগীতের পরতে পরতে ভিন্নমাত্রা যোগ করা শিল্পী বারী সিদ্দিকী। গ্রামীণ লোকসংগীত আর আধ্যাত্মিক ধারার গানকে যাদুকরী উচ্চতায় নেয়ার সুবাদে শ্রোতামহলে তৈরি হয় তার আলাদা কদর। দীর্ঘদিন সুর সাধনা করলেও গায়ক হিসেবে তার খ্যাতি আসে প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের হাত ধরে।
নেত্রকোনায় ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর জন্ম বারী সিদ্দিকীর। ছোটবেলায় পরিবার থেকেই গানে হাতেখড়ি। ১২ বছর বয়সে তালিম নেন নেত্রকোনার ওস্তাদ গোপাল দত্তের কাছে। পরে একে একে সান্নিধ্য পান ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষসহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর। একটি কনসার্টের সময় বারি সিদ্দিকীকে প্রশিক্ষণের প্রস্তাব দেন ওস্তাদ আমিনুর রহমান। পরবর্তী ছয় বছর তিনি ওস্তাদ আমিনুর রহমানের প্রশিক্ষণ নেন।
সত্তরের দশকে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাথে যুক্ত হন। ওস্তাদ গোপাল দত্তের পরামর্শে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের ওপর পড়াশোনা করেন।পরে তিনি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেন বাঁশির প্রতি। বাঁশির ওপর উচ্চাঙ্গসঙ্গীতে প্রশিক্ষণ নেন। নব্বইয়ের দশকে ভারতের পুনে গিয়ে তালিম নেন পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে । দেশে ফিরে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের সম্মিলনে একটি আলাদা ধাঁচে গান গাওয়া শুরু করেন।
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে গান করেন ১৯৯৫ সালে। ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের “শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন বারী সিদ্দিকী। তাঁর জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘শুয়াচান পাখি’, ‘পূবালি বাতাসে’, ‘আমার গায়ে যত দুঃখ সয়’, ‘ওলো ভাবিজান’, ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’। তাঁর গাওয়া গানের সংকলনে বের হয় অডিও অ্যালবাম। ১৯৯৯-তে জেনেভায় বিশ্ব বাঁশি সম্মেলনে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেন তিনিই।
সবাইকে কাঁদিয়ে এই শুয়াচান পাখি চিরঘুমের দেশে পাড়ি জমান। একসময় তাঁর আবেগী কন্ঠের গানে চোখে অশ্রু জমতো যেই শ্রোতাদের তাদেরই চোখের জলে ভাসিয়ে চলে গেলেন সুর সাধক বারী সিদ্দিকী।