ক্ষমতাসীনরাই পরিচালনা করবেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

নিউজ ডেস্ক |বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের নির্বাচন আজ মঙ্গলবার। যদিও আগামী এক বছরের জন্য শিক্ষক সমিতির কমিটি গঠিত হবে তবে সকলেই আশংকা করছে এই নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষকদের যে দল ক্ষমতায় আসবে বর্তমান উপাচার্যের বাকি মেয়াদকাল তারাই ক্যাম্পাস পরিচালনা করবে।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত একাডেমিক ভবন ৩ এর ৩০২ নম্বর কক্ষে ভোটগ্রহণ চলবে। এবার নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ১৫৩ জন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে এ নির্বাচনে এবারও আওয়ামীপন্থী দুইটি প্যানেল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ হলুদ দল এবং নীল দল প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রধান দুটি দল হলুদ ও নীল। দল দুটি নিজেদের আওয়ামীলীগপন্থী বলে স্বীকার করলেও এক দল আরেক দলকে বিভিন্ন সময়ে অন্যপন্থী বলে দোষারোপ করে থাকে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ বা হলুদ দল বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর আশ্বাভাজন বলে সবাই জানেন। অপর একটি শিক্ষকদের দল ‘মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর চেতনা, আদর্শ ও মূল্যবোধে উজ্জীবিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল’ নামে পরিচিত বর্তমানে উপাচার্য বিরোধী বলেই জানেন সবাই। এই নীল দল ছিল সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. একে এম নূর উন নবীর আশ্বাভাজন আর হলুদ দল ছিলো সেই সময়ে বিরোধী।

সম্প্রতি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে প্যানেল ঘোষণা করেছে নিজেদের দাবী করা আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুই সংগঠন হলুদ ও নীল দল। হলুদ প্যানেল থেকে সভাপতি পদে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক পদে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান। এদিকে নীল দলের প্যানেল থেকে সভাপতি পদে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবু ছালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান (তুহিন ওয়াদুদ) এবং সাধারণ সম্পাদক পদে পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান প্রতিদ্বন্দীতা করবেন।

এদিকে সাবেক উপাচার্যের সময়ের আটকে যাওয়া শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম বর্তমান উপাচার্য তাড়াহুড়ো করে কয়েকটি বিভাগের নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে নতুন শিক্ষকদের ভোট প্রধানের সক্ষমতা অর্জন করিয়ে দিয়েছেন। যেন হলুদ দল অনায়াসেই নতুন শিক্ষকদের ভোটে বিজয় অর্জন করতে পারে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে ফোন করা হলে ফোন রিসিভ করেননি।

নীলদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়েও বর্তমান উপাচার্যের নিকট থেকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য কার্যনির্বাহী সদস্য পদে হলুদ প্যানেল থেকে লড়ছেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান। নীলদলে থেকে সাবেক উপাচার্য এর কাছে সুপাত্র ছিলেন এবার আবার হলুদের প্যানেলে ভোট করছেন গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কমলেশ চন্দ্র রায়। আরো নির্বাচন করছেন নীলদল থেকে সদ্য পদত্যাগ করে হলুদে যোগদানকারী পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ বিপুল হোসেন। আবার দুটিদলই নিজেদের আওয়ামীলীগ দাবী করলে ও প্রগতিশীল প্যানেল হলুদ দল থেকে ৩ জন বামপন্থী নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, সদস্য পদে অধ্যাপক ড. পরিমল বর্মন, সহ-সভাপতি পদে সহকারী অধ্যাপক আলী রায়হান সরকার ও যুগ্ম-স¤পাদক পদে সহকারী অধ্যাপক আতিউর রহমান। এসব বিষয়ে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমি ২০১৫ সাল থেকেই প্রগতিশীলে শিক্ষক সমাজে আছি।

এদিকে নির্বাচন পার হলেও বিতর্কের অবসান ঘটবে না বলে আশংকা করা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে এক শিক্ষক জানান, ‘গত এক মাস ধরে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগ করে নীলদল যে শিক্ষকের বিপক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন তাকেই আবার শিক্ষক সমিতি নির্বাচন ২০১৮ তে নির্বাচন কমিশনার কেন বানানো হয়েছে।’ এদিকে নীলদলের নির্বাচনী ইস্তেহারে অন্যতম দাবি/প্রতিশ্রুতি ভর্তি জালিয়াতদের শাস্তি নিশ্চিত করা। আবার প্রগতিশীল বরাবরই বলে আসছে ভর্তি জালিয়াতি হয়নি, এটা নীলদলের ষড়যন্ত্র, তারা (হলুদ) জয়ী হলে ষড়যন্ত্রকারীদের দাত ভাংগা জবাব দেবেন। এই বিষয়ে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবু কালাম মোঃ ফরিদ-উল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেনি।

জানা গেছে, ৫ জানুয়ারি, ২০১৪ নির্বাচনের পরে গঠিত নীলদল নিজেদের আওয়ামীলীগপন্থী দাবি করলেও বিগত উপাচার্যের সময়ে ২৭ জন শিক্ষক এর প্রমোশন অন্যায় ভাবে আটকে রাখলে তারা বঞ্চিত শিক্ষকদের পক্ষে না গিয়ে উপাচার্য এর অন্যায় কে প্রকাশ্য সমর্থন করেন। এবার নির্বাচিত হলে তারা শিক্ষকদের অধিকার রক্ষা করেন নাকি উপচার্যকে সহযোগীতায় ব্যস্ত থাকেন, যদিও নির্বাচনী ইস্তেহারে তারা বলছেন নিয়োগের শর্তানুসারে উপাচার্যকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে উপস্থিতি নিশ্চিত করবেন। বর্তমান উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার ৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে কিন্তু তিনি এর অর্ধেকেরও বেশী সময় ক্যাম্পাস না থেকে ঢাকায় থেকেছেন। এসব নিয়ে যুগান্তরসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে নীলদলের সভাপতি ড. শফিক আশরাফকে ফোন হলে তিনিও রিসিভ করেনি।

এদিকে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুবরণ চন্দ্র সরকার তাঁর স্ত্রীকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদান করা হবে মর্মে তিনি ৩য় বারের মত দলবদল করে নীল থেকে প্রগতিশীল এ যোগদান করেছেন। উল্লেখ্য যে, ২০১১ সালে সিন্ডিকেট কর্তৃক তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলে তিনি সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ দল ছেড়ে দিয়ে প্রগতিশীল দলে যোগদান করেন এবং ৩ মাস পরে তার বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এর পরে ২০১৪ সালে জৈষ্ঠতা লংঘন করে তাকে বিভাগীয় প্রধান করার শর্তে তিনি প্রগতিশীল ছেড়ে পুনরায় নীলদলে যোগদান করেন। বর্তমান উপাচার্য যোগদানের পর থেকেই প্রগতিশীল দলের সাথে যুক্ত হবার জন্য সচেষ্ট হন এবং তাঁর স্ত্রীকে শিক্ষক হিসেবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হবে শর্তে তিনি পুনরায় নীলদল ছেড়ে প্রগতিশীল এ যোগদান করেছেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের ৩ বছর ধরে দল ভিত্তিক শিক্ষক রাজনীতির বাইরে থাকলেও হটাত করে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান প্রগতিশীলে যোগদান করেছে নির্বাচনের কয়েকদিন আগে। শোনা যাচ্ছে প্রগতিশীলে যোগদান তার স্ত্রীকে নিজের বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগপ্রদান শর্তে তিনি দলে যোগদান করেন। ইতোমধ্যে তাঁর স্ত্রীর নিয়োগ কার্যক্রমে জালিয়াতি হয়েছে মর্মে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রচার শুরু হয়ে গেছে।

নির্বাচনী ইস্তেহারে প্রগতিশীল দল গত ৬ মাসের নতুন উপাচার্যের সকল কর্মকান্ডের অংশীদার দাবীদার, বর্তমান উপাচার্য এর সময় সকল যোগ্যতা থাকা ও প্রমোশন বোর্ডের সুপারিশ প্রাপ্তির পরেও ৯ জন শিক্ষকের প্রমোশন আটকে দেন উপাচার্য। এসব ঘটনার প্রগতিশীল দলের দায়ভার কিভাবে এড়াবেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক । এই বিষয়ে গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ব্যক্তিগত কারণে আমি প্রগতিশীলে যোগদান করেছি।

উল্লেখ্য, শিক্ষক সমিতির ২০১৭-২০১৮ এ নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রানা ও নির্বাচন কমিশনার হিসেবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম এবং ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিরুজ্জামান দায়িত্ব পালন করছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *