নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ঘিঞ্জি বস্তি মতো এলাকা। সব সময় মানুষ গিজ গিজ করলেও কারোও প্রতি কারোও খেয়াল রাখার সময় নেই। যে যার যার মতো ব্যাস্ত, ছুটে চলেছে নিজ নিজ কাজে। এমনই ব্যস্ততম পরিবেশে কোথা থেকে জানি গগনবিদারী কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। একটু মনযোগ দিয়ে শুনলে বোঝা যায় দুই তিন বছর বয়সী কোন শিশু কাঁদছে। খুঁজতে থাকে উৎসুক মানুষ কোথা থেকে আসছে এই কান্নার শব্দ? খুঁজতে খুঁজতে বেশ কিছু উৎসুক জনগন এসে জমায়েত হয় একটি তালাবদ্ধ ঘরের সামনে। এতক্ষণে নিশ্চিত হয়ে গেছে সবাই ঐ তালাবদ্ধ ঘর থেকেই ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। অবশ্য ঐ ঘর থেকে পাওয়া যাচ্ছে উটকো দুর্গন্ধ! উপস্থিত সবার বুঝতে বাকি থাকে না কোণ একটা ঝামেলা হয়েছে। খবর দেওয়া হয়েছে পুলিশে সাথে আছে গণমাধ্যম কর্মীরা।
পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তালা ভাঙ্গে এবং ঘরে প্রবেশ করে মায়ের পচন ধরা লাশ পায়। পাশেই কাঁদতে থাকা শিশুটিকে দেখা যাচ্ছে, মাঝে মাঝে কান্না থামিয়ে মৃত মায়ের আঙ্গুল চুষে খাচ্ছে! উপস্থিত পুলিশ সদস্যসহ প্রতিবেশী ও সাংবাদিকরা হতবাক হয়ে পড়েন এ দৃশ্য দেখে।
গত বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কোতালেরবাগ বৌ-বাজার এলাকার একটি টিনশেড বাড়ি থেকে গৃহবধূ রিমা আক্তারের (২২) পচন ধরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই সময় খাটের ওপর লাশের পাশে বসে কাঁদছিল ও মৃত মায়ের আঙ্গুল চুষে খাচ্ছিলো তার দেড় বছরের শিশু নাহিদ।
ওই বাড়ির মালিক প্রয়াত আছিলা সরকার। তার ছোট ছেলে আল আমিনের স্ত্রী রিমা আক্তার। গত সোমবার ৩ দিন আগে রিমাকে ছেলে কোলে বাসার সামনে দেখেছিলেন প্রতিবেশীরা।
পুলিশের ধারণা- রিমাকে হত্যার পর বাসার বাইরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যায় তার স্বামী আল আমিন। রিমা তার দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী নির্যাতন সইতে না পেরে চলে যান। দুই বছর আগে রিমাকে বিয়ে করে আল আমিন। সে ওই এলাকার পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী। কিছুদিন আগে তার বড় ভাই বাবুকে মাদকসহ ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। বর্তমানে সে জেল হাজতে।
নিহত রিমার প্রতিবেশী নাসিমা বেগম বলেন, ‘গত সোমবার সর্বশেষ রিমাকে সন্তান কোলে তাদের বাসার দরজায় দেখতে পাই। এর পর থেকে আর দেখা যায়নি তাকে। আল আমিন মাদক ব্যবসায়ী হওয়ায় তাদের সঙ্গে বেশি মিশতাম না। বুধবার দুপুরে আল আমিনের ঘর থেকে শিশুর কান্নার আওয়াজ পাই। অনেকক্ষণ যাবৎ শিশুটি কেঁদেই চলেছে। এক পর্যায়ে তাদের ঘরের সামনে গিয়ে দেখি ঘর তালাবদ্ধ। কিন্তু ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ আসে, সঙ্গে পচা গন্ধও। তখন অন্যান্য প্রতিবেশীকে বিষয়টি জানালে তারা থানায় খবর দেন। পুলিশ বিকেলে এসে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখে, রিমার লাশের পাশে বসে কাঁদছে শিশু নাহিদ। এ ঘটনায় আমরা হতবাক হয়ে গেছি। কী থেকে কী হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না!’
ফতুল্লা মডেল থানার এসআই অটল দাস বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই হৃদয়বিদারক। মায়ের পচন ধরা লাশের পাশে বসে শিশুটি কাঁদছিল। ভয় আর তৃষ্ণায় কাতর ছিল শিশুটি। আমরা তাকে উদ্ধার করে আপাতত এক প্রতিবেশীর কাছে দিয়েছি কিছু খাওয়ানোর জন্য।’
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) শাহজালাল বলেন, পচন ধরে গেছে লাশটিতে। কান, নাক, চোখ ও মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে দেখা গেছে। তবে কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়টি এখনই বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনার সময় শিশুটি ঘুমিয়ে ছিল। ঘটনার পর থেকে নিহতের স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের না পাওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী আল আমিনই রিমার সম্ভাব্য খুনি।