‘বন্দুকযুদ্ধে’ ঠাকুরগাঁসহ নয় জেলায় নিহত ১২; মোট নিহত ১০৩

বীরগঞ্জ নিউজ ডেস্কঃ

মাদক নির্মুলের জন্যে দেশ জুরে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন পরিচালিত হচ্ছে র‍্যাব ও পুলিশের বিশেষ অভিযান। গভীর রাত থেকে শুরু করে ভোর পর্যন্ত চলা এসব অভিযানে গত কাল রাতেও সারা দেশে ঢাকাসহ নয় জেলায় নিহত হয়েছে মোট ১২ জন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের হিসেব অনুযায়ী গতরাতসহ দশ দিনে চলা এসব অভিযানে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা দাড়িয়েছে মোট ১০৩ জন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, এর মধ্যে যশোর ও সাতক্ষীরায় মাদক ব্যবসায়ীদের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে ৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

১.ঠাকুরগাঁও:

হরিপুর উপজেলার আটঘুড়িয়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হারুন (৪৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তিনি শীতলপুর গ্রামের প্রয়াত আব্দুল আজিজের ছেলে।

হরিপুর থানার ওসি রুহুল কুদ্দুস বলেন, ভোর রাতে আটঘুড়িয়া এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানের সময় মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়।

ঘটনাস্থল থেকে ১১০ বোতল ফেনসিডিল, চারটি কার্তুজের খোসা ও চারটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।

ওসি বলেন, “হারুন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং তার নামে বিভিন্ন থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৭টি মামলা রয়েছে।”

২. ঢাকা
সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টার দিকে রাজধানীর দক্ষিণখানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
৩. ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহের ভালুকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী মিজান নিহত হয়েছে। নিহত মিজানের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

৪. কুমিল্লা
কুমিল্লার মুরাদনগরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে তিন পুলিশ সদস্য। উপজেলার নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের গুঞ্জর এলাকায় ওই ঘটনা ঘটে। নিহতদের নামে মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে।

৫. কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শেহালা মাঠে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ ২ মাদক ব্যবসায়ী মুকাদ্দেস আলী (৪২) ও ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল (৪৮) নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পুলিশের ৪ সদস্য। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। দৌলতপুর থানার ওসি (তদন্ত) আজগর আলী জানান, একদল মাদক ব্যবসায়ী দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেহালা মাঠে মাদক ক্রয় বিক্রয় করছে এমন গোপন সংবাদ পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশের টহল দল সোমবার রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুইজন মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তাদের উদ্ধার করে দৌলতপুর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীদের মৃত ঘোষণা করেন।

৬. যশোর
যশোরের চাঁচড়ায় দু’দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে আসর আলী (৫৬) ও মানিক (২৬) নামের ২ জন নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছে।
যশোর কোতয়ালী থানার ওসি একেএম আজমল হুদা জানান, সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে চাঁচড়া রায়পাড়া প্রাইমারি স্কুল এরাকায় দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে বলে খবর পান। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ সেখানে গেলে পুলিশের উপস্থিতি পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। এ সময় সেখানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দু’জনকে পড়ে থাকতে দেখে তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।

৭. সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার কলারোয়ার চুকনায় মাদক চোরাচালানিদের দুই গ্রুপ মাদক ভাগাভাগি নিয়ে গোলাগুলিতে আনিসুর রহমান আনিস (৪০) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। সোমবার রাত সোয়া ২ টায় গোলাগুলির খবর পেয়ে খোরদো পুলিশ ক্যাম্পের উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম একদল পুলিশ সদস্য নিয়ে সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। গোলাগুলি থেমে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনিসুরকে উদ্ধার করা হয় বলে জানান কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিপ্লব কুমার নাথ। ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। তবে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী নাজমা বেগমের দাবি তার স্বামীকে সোমবার সকালে বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে গেছে সাদা পোশাকধারীরা। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

৮. বরগুনা:

বরগুনার বেতাগীতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ফিরোজ নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার ভোরে বেতাগী উপজেলার কাজিরাবাদ ইউনিয়নের কুমড়াখালী গ্রামে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত ফিরোজ বেতাগী পৌরসভার হাশেম মৃধার ছেলে। তার বিরুদ্ধে বেতাগী থানায় নয়টি মাদক মামলা রয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বেতাগী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশিদ জানান, ভোরে কুমড়াখালী গ্রামে মাদক উদ্ধার অভিযানে মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে র‌্যাবের গুলি বিনিময়ে মাঝে পড়ে ফিরোজ নিহত হন। এসময় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ানশ্যুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি ও ২৪০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি।

৯. ব্রাহ্মণবাড়িয়া:

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় মাদক ও ডাকাতিসহ আট মামলার আসামি জনি মিয়ার (৩০) গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি কার্তুজ, ২টি ছোরা, ১টি চাপাতি উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে পৌর শহরের খালাজোড়া এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত জনি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার উপজেলার খাইয়ার গ্রামের ফিরোজ মিয়ার ছেলে।এদিকে পুলিশের দাবি ডাকাতির মালামাল ভাগাভাগির বিরোধে সহযোগীদের গুলিতে জনি নিহত হয়েছেন।

আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন তরফদার জানান, রাতে ডাকাতির মালামাল ও মাদক ব্যবসার বিরোধকে কেন্দ্র করে জনি ও তার সহযোগীদের মধ্যে ‘গোলাগুলি’র ঘটনা ঘটে। পরে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পৌঁছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জনির মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত জনির বিরুদ্ধে মাদক, ডাকাতি, ও চোরাচালানসহ আখাউড়া ও অন্যান্য থানায় ৮টি মামলা রয়েছে। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান ওসি মোশারফ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *