ঢেপা ব্রীজ নিয়ে গত পর্বে লিখেছিলাম বীরগঞ্জের রাজনীতির অগোছালো একটা গল্প। এবারের গল্পটা হয়তো গোছানো নয় তবে বিষয়টা বর্তমান স্থানীয় রাজনীতির হটকেক! এবারের পর্বটি থাকছে স্থানীয় রাজনীতির বিবেক এবং বীরগঞ্জের জনগণের কয়েকটি রাজনৈতিক প্রশ্ন নিয়ে।
বিশেষ করে গত ১-২ বছরে স্থানীয় রাজনীতিতে বর্তমান সাংসদের বিরুদ্ধে এত এত অভিযোগ নিজ দলীয় লোকেদের মাধ্যমেই প্রকাশ্য সমাবেশে কিংবা পত্র পত্রিকায় এসেছে,সেটা বীরগঞ্জের রাজনীতির মূল জায়গা হয়ে রয়েছে,বিরোধীদলের বিন্দুমাত্র উপস্থিতি না থাকলেও সাংসদের পক্ষে বিপক্ষে বেশ সরগরম স্থানীয় শহীদমিনার মোড়।
এবার আসল কথায় আসা যাক, বেশ কিছুদিন থেকেই আমরা দেখছি বর্তমান সাংসদ এর সাথে স্থানীয় দলীয় নেতা কর্মীদের একটি দূরত্ব। পত্র পত্রিকাতেও আমরা দেখতে পাচ্ছি অবাঞ্ছিত ঘোষনা এবং সাংসদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির স্পষ্ট অভিযোগ। আর এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিবারই সাংবাদিকদের কাছে নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন বর্তমান সাংসদ। এখন জনগণের জায়গা থেকে সাধারণ ভাবে কিছু প্রশ্ন এসেই যায়,যারা প্রশ্ন তুলছেন তারা ঠিক?নাকি এম পি যেটা বলছেন সেটা ঠিক? নাকি দু-পক্ষই অল্প অল্প ঠিক?
শেষ প্রশ্নটার বাস্তবতায় মূল্য থাকলেও নৈতিক মূল্য নেই বললেই চলে। বীরগঞ্জের স্থানীয় রাজনীতি প্রেক্ষাপটে প্রথম প্রশ্নটার উত্তর যখন হ্যা বোধক হয় তখন আরো কিছু প্রশ্ন চলে আসে, সাংসদের বিরুদ্ধে বীরগঞ্জে স্থানীয় পর্যায়ে তার নিজের দলীয় লোকজন যে সকল অভিযোগ তুলছে সেখানে তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করা হচ্ছে তারা যদি সত্যি অভিযোগ গুলো তুলে থাকেন,তাহলে তো পরিস্থিতি ভয়ংকর!
জনগণের শোষিত হওয়ার অভ্যাস আছে,তাই বলে এতটা? আনুষ্ঠানিক অভিযোগের পাশাপাশি প্রমাণ ছাড়া যে অভিযোগ উড়ে বীরগঞ্জের আকাশে-বাতাসে সেগুলো এক একটা আঁতকে ওঠার মত । এগুলো তো নিপীড়নের পর্যায়ে পরে। সেদিক দিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই এই সব অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। স্থানীয় অনেক রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব সে প্রশ্ন তুলছেও কিন্তু শুধু কি প্রশ্ন তুলেই ক্ষ্যান্ত হওয়া উচিত?
যে গুরুত্ব পূর্ণ অভিযোগ তার বিরুদ্ধে করা হচ্ছে,সেগুলোর আইনগত পদক্ষেপ কেন তারা নিচ্ছেন না? নাকি নেয়ার সাহস পাচ্ছেন না? যদি সাহসই না পান তাহলে জনগণের সাথে রাজনীতি তারা কেন করছেন? এ পর্যন্ত ১০ এর অধিকবার সাংসদকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা নিয়ে কিংবা এম পির দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বেশ কিছু জাতীয় দৈনিকে এবং যেটা মাননীয় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিও এড়ায়নি কিন্তু কথা হচ্ছে সেসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে একটা মামলাও কি হয়েছে আজ পর্যন্ত? না হয়ে থাকলে কেন হয়নি? কিংবা অবাঞ্ছিত ঘোষনা কি শুধুই রাজনৈতিক ফায়দা লুটার জন্য? নাকি জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে? সে প্রশ্নটা কিন্তু এম পির বিপক্ষের নেতাদের কাছে থেকেই যায়।
আবার,বর্তমান সাংসদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এরকম, বর্তমান সাংসদ সাংবাদিকদের কাছে প্রতিবারই দোষ অস্বীকার করেই পার পেয়ে যেতে চাইছেন, তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এত কথা যদি মিথ্যাই হবে তাহলে তারা ( যারা অভিযোগ করছেন ) কেন মানহানির মামলার সম্মুখীন হচ্ছেন না? মাননীয় এম পির কাছে এই প্রশ্নও সাধারণ মানুষ করতেই পারে।
একজন সাংসদ অবশ্যই তার জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন, কারণ তার দায়িত্ব জনগণের ভালো মন্দ দেখা, সেই তিনিই যদি এত এত দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হোন, হোক সেটা সত্য কিংবা মিথ্যা,তার উচিত তার জায়গা থেকে তার অবস্থান জনগণের কাছে পরিষ্কার করা, কিন্তু প্রতিবারই তার বক্ত্যব্যে বিরোধীদলীয় একটা সুর থাকেই।
পরিশেষে একটা কথাই জনগণের পক্ষ থেকে মাথায় আসছে ,স্থানীয় রাজনীতিবিদের উপর মফস্বল এই এলাকাটার জনগন আস্থা রাখতে চায় কিন্তু জনগণকে সেই সুযোগ তো দেয়া উচিত।
লিখেছেনঃ তৌফিক রয়েল