বিবেকের কাঠগড়া

আত্রাই নদীর তীরে,বিশাল বটবৃক্ষমূলে
একদিন আনমনে বসে ছিলেন এক জ্যের্তিময় পুরুষ,
শালপাংশু শরীর,মাথায় একরাশ ঝাকরা চুল,
বাতাসে চুলের আন্দোলন,ঠোঁটের কার্নিশে অপার্থিব স্মিত হাসির আভা,মৌনবাক ধ্যানমগ্ন।

সহসা মৌনতার প্রাচীর ভেঙে গেল,
হাত ইসারায় ডাকলেন আমায় কাছে।
মেঘমন্ত্র স্বরে প্রশ্ন করলেন,কি জিজ্ঞাসা তোমার?
কম্পিত কন্ঠে শুধালাম,জীবনের পরম সত্যটি কি?
চোখের দৃষ্টিকে প্রসারিত করলেন তিনি,
দূরে,বহু দূরে কোন এক শূণ্যমার্গে।
অনুচ্চ স্বরে বললেন,যেন স্বগতোক্তি করছেন,
আমি দেখলাম আমার চোখের সম্মুখে
মোমদানিতে রাখা জ্জ্বলন্ত মোমের মতো,
তিল তিল করে নিঃশেষিত হয়ে গেল
আমার পিতা মাতার যৌবন।
অতঃপর আমরা…

তোমার ঐ চিরযৌবনা শরীর ও একদিন শ্মশান ভুমিতে পরিনত হবে,
আমার খোচা খোচা দাড়ি,গোফ একরাশ এলোচুলেও শুভ্রতা গ্রাস করবে।

সবই নশ্বর…
কিছুই টিকবেনা সংসারে।
প্রেয়সীর প্রেমডোর ছিড়ে চলে যায় প্রেমিক প্রবল,
মাতৃবক্ষ শূন্য হয়,স্বজনো বিজনে যায়।
আদিগন্ত বিস্তৃত বিশাল আকাশ,নক্ষত্ররাজি।
সবুজ ফসলের মাঠ,তরুলতা গুল্মাদি-
এই আত্রাই নদী,সমুদ্র,পাহাড় পর্বত পাখপাখালির গান,
পুষ্পের সৌরভ, যাবতীয় সৌন্দর্য,প্রিয় অপ্রিয় সবকিছু মিথ্যা হয়ে যায়,
সত্য শুধু একটাই একদিন চলে যেতে হবে দূরে বহুদূরে না ফেরার দেশে।

তারপর দীর্ঘ নীরবতা,
আত্রাই নদীর কল্লোল ম্লান হয়ে আসে,
বাউল বাতাস যেন মূর্ছা যায়!
অতঃপর তিনি হাত রাখলেন আমার হাতে,
চোখে চোখ রেখে অপলকে চেয়ে রইলেন দীর্ঘক্ষণ,
চোখ বেয়ে দুফোটা অশ্রু ঝড়ছিলো তার।
মৌনতা ভেঙে বললেন ঐ দূর দেশেই আমাদের ঠিকানা,
এ ধরায় আর মিলবোনা দুজনা।

এই তো ঢের যা পেয়েছি,চাওয়া পাওয়ার খাতায় হিসাব মিলাতে যেও না,অনুভবেই রয়ে যাবো দুজনা।
অতঃপর চিরতরে বিদায় নিলেন,

আর আমি হতাশাগ্রস্থ চোখে চেয়ে রইলাম তার চলে যাওয়া পথ পানে।
আজ অবধি চেয়ে আছি কিন্তু দেখা মিলেনি তার,
হয়তো ডুবন্ত চাঁদের সাথে সেও হারিয়ে গেছে অন্ধকার সাগরের মৌনবন্দরে,
কিন্তু সে আজো বেঁচে আছে আমার হৃদয় কন্দরে।

লিখেছেঃ জলস্পর্শী তটিনী 

ছবিঃ গুগল 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *