অবহেলায় গণ কবরগুলো নষ্ট হচ্ছে, শিশুরা জানে না এগুলো কি !

Share

নাজমুল হাসান সাগরঃ দেশে মুক্তিযুদ্ধ চলা কালিন সময়ে পাক বাহিনি নিজেদের অস্তিত্ব ও দখলদারিত্ব বোঝনোর জন্যে চালিয়েছে ব্যাপক গণ হত্যা।দেশের বিভিন্ন যায়গায় গণ কবরগুলো দেখলেই প্রমান মেলে এই কথা ও এর ভয়াবহতার।কোথাও কোথাও গণ হত্যার নিদর্শন হিসেবে সেসব যায়গা সনাক্ত ও সংরক্ষণের ব্যাবস্থা করেছে রাষ্ট্র আবার কোথাও এখন পর্যন্ত সনাক্ত করাও সম্ভব হয় নাই এমন যায়গা।মুলত দেশ জুরে ভীতি তৈরী করার লক্ষ্যে সে সময় পাক বাহিনি মুক্তিকামী সাধারণ মানুষদের ধোরে ধোরে নিয়ে গিয়ে এক লাইনে দাড় করিয়ে গুলি করে মারতো। মারার পরে সব লাশগুলো একই সাথে মাটি চাপা দিয়ে দেওয়া হতো ।উপরে বর্ণিত ভাবে যাদের মেরে মাটিতে পুতে রাখা হতো সেই যায়গাগুলোই দেশ স্বাধীনের পরে গণ কবর নামে চিহ্নত করা হয় ।

এমনি একটি গণ কবরের আছে বীরগঞ্জ উপজেলার দশ নং মোহন পুর ইউনিয়নের মাটিয়া কুড়া(কৃষ্ণ পুর) গ্রামে।৭১ এ বীরগঞ্জ উপজেলায় সন্মুখ যুদ্ধ খুব বেশি না হলেও পাক বাহিনি ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করেছিলো বেশ শক্ত পোক্ত ভাবেই।তারই ধারাবাহিকতায় উপজেলার বড় করিমপুর গ্রাম থেকে তারা ধোরে নিয়ে আসে মোট সাত জন সাধারন ও সচেতন মানুষকে । যারা সে সময় এলাকায় থেকে নানা ভাবে মুক্তির সংগ্রামের স্বপক্ষে কাজ করেছিলেন বলে জানা যায় । আহাম্মদ হোসেন, আমীর উদ্দীন,কাজীমুদ্দিন ও আঃ ছাত্তার,আজগর আলী, সাগর আলী এবং হোসেন আলীকে তুলে নিয়ে আসে কোন এক দিন পাক বাহিনি।গাড়িতে করে সরাসরি তাদের নিয়ে আসা হয় মাটিয়া কুড়া গ্রামের নির্জন স্থানে। সেখানে তাদের চোখ বেধে সারিবদ্ধ ভাবে দাড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে মেরে ফেলা হয় । মারার পরে লাশগুলো এক সাথে করে মাটি চাপা দেওয়া হয় । দেশ স্বাধীন হবার ঊনচল্লিশ বছর পর ২০১২ সালে এই যায়গাটিকে গণ কবর হিসেবে চিহ্নিত করে এখানে একটি স্মৃতি ফলক ও স্মৃতি স্তম্ভ করা হয় রাষ্ট্রীয় সহায়তায়। এই যায়গাটি অত্র এলাকায় পুরাতন কবর স্থান হিসেবেই অধিক পরিচিত ।স্থাপনা তৈরীর পাঁচ বছর পরেই নানা অযত্ন ও অবহেলায় দেখার অবস্থা নেই এই গণ কবরটি!

বিজয় দিবসের দুই দিন আগে গিয়ে দেখা যাইয়,সেখানে কোন আলাদা তদারকি নেই , নেই কোন যত্ন । অবহেলা ও অযত্নে দেখার শ্রী নেই এই স্মৃতি স্তম্ভটির। এই গণ কবরের অদুরেই রয়েছে মাটিয়া কুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।বিদ্যালয়ের মাঠে খেলা ধুলা করছে কিছু ছাত্র-ছাত্রী।এগিয়ে গিয়ে তাদের বেশ কয়েক জনকে জিজ্ঞেশ করা হয় ঐ যে স্মৃতি স্তম্ভ দেখা যাচ্ছে, তোমরা কি জানো ঐটা কিসের ?অখানে কি হয়েছিলো , কি কারনে এই স্থাপনা এখানে করা হয়েছে ? আলাদা আলাদা ভাবে বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে এই প্রশ্ন করা হলে কেও কোন উত্তর দিতে পারে নাই ।

অযত্ন আর অবহেলায় পরে আছে এই ইতিহাস বিধৌত যায়গাটি। এত কাছে থেকেও নতুন প্রজন্ম জানে না এখানে কি হয়েছিলো । চিন্তায় ছেদ পরে, এমন প্রশাসন ও নতুন প্রজন্ম দিয়ে এই দেশ কি করবে ? যারা নিজেদের স্বাধীনতার ইতিহাস সংরক্ষন করতে জানে না , আগামী প্রজন্ম জানছেই না কি তাদের দেশ সৃষ্ঠির ইতিহাস ? এই দায় কাদের ?

Recent Posts

আর্কাইভ

সকল ক্যাটাগরি

Related Articles

বীরগঞ্জে সংবাদ কর্মীদের নিয়ে জামায়াতের ইফতার মাহফিল

নিজস্ব প্রতিবেদক দিনাজপুরের বীরগঞ্জে সকল সংবাদ কর্মীদের নিয়ে জামায়াতের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত...

কাহারোলে মানবিক সংগঠন হাইয়্যা  আল ফালাহ এর উদ্যোগে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ

নিজেস্ব প্রতিবেদক শুক্রবার (১৪ মার্চ) ২০২৫ দিনাজপুরের কাহারোলে মানিবক সংগঠন হাইয়্যা আল...

বীরগঞ্জে জমিসংক্রান্ত বিরোধে উভয় সংঘর্ষে নিহত ১, আটক ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক দিনাজপুরে বীরগঞ্জে জমিসংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে সংঘর্ষে আহত মো. মফিজুল ইসলাম...

বীরগঞ্জের নবাগত ইউএনও তানভীর আহমেদ শহীদ আল আমিনের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক দিনাজপুরে বীরগঞ্জে নবাগত ইউএনও তানভীর আহমেদ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে...

দিনাজপুর জেলা ও বীরগঞ্জ উপজেলার সকল খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন।

নির্বাহী সম্পাদক: নাজমুল হাসান সাগর | প্রধান কার্যালয় : ঝাড়বাড়ী, বীরগঞ্জ, দিনাজপুর | ইমেইল: [email protected]

ওয়েবসাইটের লেখা/ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি।