অর্ঘ্য বিশ্বাস,বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারার হতাশায় আত্মহত্যা করেছন তিনি। মৃত্যুর আগে সে মাতৃভূমিকে একটা চিঠি লিখে গেছেন। দেখুন অর্ঘ্যর চিঠিটা :
প্রিয় বাংলাদেশ,
আশা করি ভালো আছো। তোমার মেরুদন্ডহীন সিস্টেমের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানলাম। বোকার মতো শিরদাঁড়াটা সোজা রেখে জীবনটা পার করার যে জেদ ছিল সেটা তোমার মেরুদন্ডহীনতার তন্ত্রে হার মেনে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিতি থেকে এবং সিজিপিএ’র জন্য পড়াশোনা করে মেধাবী তকমা পাওয়া কিংবা দুর্ঘটনায় বা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর পর মিডিয়ার প্রচারের স্বার্থে মেধাবী খেতাব নেওয়ার কোন ইচ্ছা ছিল না। শুধু শুধু গাধার মতো কোন ইস্যু পেলে চেঁচিয়ে বারবার তোমার মেরুদন্ডহীনতা বোঝানো ছাড়া বোধ হয় আমি আর কিছু পারতাম না।
তোমার মেধাবী সূর্য সন্তানদের দেখে আমার বড় আফসোস হয়। দেখ, কীভাবে তারা তাদের মেধাগত যোগ্যতাবলে তোমার সিস্টেমের সাথে সুন্দরভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তারা আমাদের কী বলে জানো? যুক্তিবাদী বেয়াদব। আমরা ডিপার্টমেন্ট-এর বদনাম করি, দল করে সুন্দর সাজানো একটা ডিপার্টমেন্টকে নষ্ট করি। সিনিয়র ভাইদের সাথে ঘুরে ঘুরে স্যারদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করি।
কাল সারা রাত অনেক ভাবলাম বুঝলে। সত্যি বলতে কী, আমার এখন মনে হচ্ছে আমরা এই “যুক্তিবাদী বেয়াদবেরা” আসলেই তোমার ক্ষতি করছি। পদ্মা ব্রীজ হচ্ছে, দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে, আধুনিকায়ন হচ্ছে। সুশাসন এবং আইন ব্যবস্থায় গুম, হত্যা, সংখ্যালঘু নির্যাতন হচ্ছে, কোটি কোটি টাকা লোপাট হওয়ার পরও মন্ত্রী মহোদয় সেটা হাতের ময়লার মতো উড়িয়ে দেন। প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। দলীয় এবং নিয়োগ বানিজ্যের কল্যাণে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা বিশাল সংখ্যাক ডিপ্রেসড শিক্ষার্থী তৈরী করছেন। গর্ব করার জন্য বহিঃবিশ্বে তোমার বংশদ্ভূত সন্তানেরা রয়েছেন যারা নিজেদের উন্নতির স্বার্থে তোমাকে ত্যাগ করে অন্য দেশকে আপন করে নিয়েছে।
তোমার মেরুদন্ডহীন বিদ্বান সূর্য সন্তানেরা তোমার এত উন্নতি করছে সেখানে আমি তোমার কি উপকার করছি বল? তোমার টাকায় পড়ে, খেয়ে তোমার সিস্টেমের বিরোধিতা করছি, তোমার সাথে বেঈমানী করছি। দেখে নিও, আর করব না। সেদিন ভিসি স্যার এবং চেয়ারম্যান স্যারের কাছে মাফ চাইনি। আজ তোমার কাছে মাফ চাইছি। তোমার আর কোন ক্ষতি করব না। আর তোমার বিরোধিতা করব না। সোজা হওয়া এই মেরুদন্ড ভেঙ্গে নোয়াতে পারব না। সেটা আমার দাঁড়া হবে না। সেজন্য অন্য পথটা বেছে নিলাম।
ভয় পেয় না। ধর্মান্ধতায় অন্ধ, ক্ষমতাবলে ভীত, অর্থ মোহে ঘুমন্ত এই বালির নিচে মাথা ঢুকিয়ে থাকা উটপাখি সদৃশ জাতি কোনদিনও তোমার ভেঙ্গে পড়ে থাকা মেরুদন্ড সোজা করার চেষ্টা করে তোমাকে যন্ত্রণা দিবে না। আমার মতো যেসব “বেয়াদবেরা” তোমার সিস্টেম বাগের কারনে ভুল করে জন্মেছে তারাও আস্তে আস্তে তোমার সিস্টেমের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। আশাকরি পৃথিবীতে তুমি তোমার উন্নতির ধারা বজায়ে রাখবে। ভাল থেক।
ইতি
যুক্তিবাদী বেয়াদব