স্পোর্টস ডেস্কঃ
বিশ্বের খ্যাতনামা টেলিভিশন আল জাজিরা ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। তাদের দীর্ঘ অনুসন্ধানের ম্যাচ ফিক্সিং ডকুমেন্টারি প্রচারিত হয়েছে। সেখানে ম্যাচ ফিক্সারদের দাবি, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ম্যাচ তাদের হাতে পাতানো হয়ে থাকে। আর টেস্ট ম্যাচে ইচ্ছে করে বাজে খেলার জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররা ঘুষ নিয়ে থাকেন।
আল জাজিরার ছদ্মবেশী ক্রাইম দল তদন্তে নেমেছিল। তারা দেখেছেন, ফিক্সাররা যে অনুমানের কথা বলেন হাই প্রোফাইল কোনো টেস্ট নিয়ে তাও বিশ্বের অন্যতম সেরা দুই দল নিয়ে তাই ঘটে থাকে। খেলার নির্দিষ্ট জায়গায় সেটাই প্রকাশ পায়। আল জাজিরা জানাচ্ছে, আমাদের তদন্তে ম্যাচ ফিক্সাররা এটা জানিয়েছে যে ২০১৬ সালে চেন্নাইয়ে ভারত-ইংল্যান্ড এবং গত বছরের মার্চে রাচিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ স্পট ফিক্সারদের ভূমিকা ছিল।
গুরুতর একটা রেকর্ডিং আছে আল জাজিরার কাছে। সেখানে মুম্বাইয়ের ম্যাচ ফিক্সার আনিল মুনাওয়ার তাদের জানিয়েছেন যে তথ্য বিক্রি করে বেটিং থেকে বিপুল পরিমান টাকা কামান তিনি। ‘আমি আপনাকে যে স্ক্রিপ্ট দিচ্ছি তার সবই ঘটবে, ঘটবে এবং ঘটবে।’
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি জানিয়েছে, আল জাজিরার এই তদন্ত তারা গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র নিশ্চিত করেছে যে মুনাওয়ার ডি-কোম্পানি নামে একটি ক্রিমিনাল মাফিয়ার সাথে কাজ করে। এই সিন্ডিকেট ভারতের অবৈধ বেটিং দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই বাজারের মূল্যমান বছরে ৬০ বিলিয়ন ডলার।
৭০ শতাংশ ম্যাচই পাতানো
আল জাজিরার এই ছদ্মবেশী তদন্ত ১৮ মাসের। সেখানে দেখা গেছে যতোটা ভাবা হয় তারও চেয়ে অনেক বেশি ও বাজেভাবে ম্যাচ ফিক্সিং ছগিয়ে পড়েছে। কিন্তু এটা প্রমাণ করা প্রায় অসম্ভব। আল জাজিরা আন্ডারওয়ার্ল্ডের একজনকে মুনাওয়ারের সাথে যোগাযোগ তৈরির কাজে ব্যবহার করে।
‘৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ম্যাচ আমরা ঠিক করতে পারি…পাতাতে পারি।’ আল জাজিরার ডকুমেন্টারিতে মুনাওয়ার বলেছেন, তিনি এই কাজে আছেন ৬ থেকে ৭ বছর হলো। তার দাবি, তাদের সিন্ডিকেট ম্যাচের ফলই ঠিক করে দেয়। কিন্তু এটা ছোট্ট ছোট্ট অংশে ভাগ করে চূড়ান্তে নিয়ে যাওয়া হয়। খেলোয়াড়কে টাকা দেওয়া হয় তার দলের রান নিচে রাখার জন্য। বুকমেকাররা এভাবে ছোট্ট বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করেন।
ছোটো ছোটো আকারে ফিক্সিং বা স্পট ফিক্সিংয়ে টাকার সমাগম বেশি। মানাওয়ারের কথায়, ‘সেশনই ভালো। কারণ, বাজি ধরার সুযোগ তাতে বেশি থাকে।’ চেন্নাই ও রাচি টেস্টের ব্যাপারে মুনাওয়ার টসের পর আল জাজিরার দলকে ফোন করেন। জানান, এই ম্যাচে কি ধরনের ফিক্সিং ঘটতে যাচ্ছে। দুবারই সেশন ফিক্সিং ছিল।
সেশনের শুরুতে মুনাওয়ার বলেছিলেন ফিক্সিংয়ের পুরোটা। দুই ম্যাচেই তিনি যেভাবে ফিক্স করার কথা বলেছিলেন সেটাই ঘটেছিল। তার দাবি, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার কম খেলোয়াড়ই এই ম্যাচ পাতানোর সাথে জড়িত হয়। ডকুমেন্টারিতে তিনি বলেছেন, ‘শুনুন, পাতানো না হলে তারা যেমন ইচ্ছে তেমনই খেলবে তাই না? কিন্তু সেটিং হয়ে গেলে আমরা যেভাবে চাইবো সেভাবেই খেলতে হবে তাকে।’
আইনগত দিক বিবেচনা করে আল জাজিরা কোনো খেলোয়াড়ের নাম প্রকাশ করেনি। কারণ, এটা তো অভিযোগ। তবে তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযুক্ত ওইসব খেলোয়াড়ের নাম পাঠাবে। ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে সব অস্বীকার করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়রা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মুনাওয়ার বলেছেন, তাদের কোম্পানি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়ে থাকেন বিশ্বের সব নামী দলের খেলোয়াড়দের। কোনো ক্রিকেট কর্মকর্তা বা কোনো মাধ্যমের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়। ‘খেলোয়াড়দের দাম আমরা ঠিক করি না। বৈশ্বিক যা মূল্য তাই আমরা দেই সে যেই হোক না কেন।’ মুনাওয়ার জানিয়েছেন, ‘তারা টাকা নেওয়ার পর ভাবে কতোটুকু কি করবে।’
মানাওয়ারের কথায়, তাদের কোম্পানি বিশ্বের প্রায় সব জাতীয় দলের খেলোয়াড়দেরই ঘুষ দিয়েছে। আর তা সর্বোচ্চ পর্যায়ের খেলার জন্য যা কিনা টেস্ট আর আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য। তারা অবশ্য ওয়ানডে ম্যাচ এবং দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা টি-টুয়েন্টি টুর্নামেন্টও ফিক্স করে। এই কোম্পানির ২০ থেকে ২৫ জন ‘বিরাট বড়’ ক্লায়েন্ট আছে প্রত্যেক ম্যাচে যারা ১৫ লাখ ডলারের মতো নিয়ে থাকে দলের জন্য। মাঝে মাঝে ক্রিকেট সংস্থা থেকে সামান্য সমস্যা হলেও সেটা তারা সামলে নেন। ‘টাকা সব পারে-‘ বলেন মুনাওয়ার।
আল জাজিরা