ছাত্রলীগে নেতৃত্বে কে আসবেন? কার হাতে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনের নেতৃত্ব, তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের জল্পনা-কল্পনা। এসব জল্পনা-কল্পনার মধ্যে আজ শুক্রবার বিকেল তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন।
ছাত্রলীগের বিগত সম্মেলনগুলোর চেয়ে এবারের সম্মেলনটি ভিন্ন হতে চলেছে। বিগত সম্মেলনগুলোর আগেই জানা গিয়েছে কে হবেন সংগঠনটির নেতৃত্বদানকারী। এর পেছনের মূল কারণ ছিল ছাত্রলীগের ‘সিন্ডিকেট’। এই সিন্ডিকেটের কারণে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দুর্বল হয়ে গেছে এবং চেইন অব কমান্ড দুর্বল হয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এই ধারা ভাঙতে এবার সিন্ডিকেট তো থাকছেই না, পাশাপাশি ভোটও থাকবে না।
ভোট না থাকার পেছনের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, বিগত কমিটিগুলোতে ছাত্রলীগের ‘সিন্ডিকেট’ ভোট নিয়ন্ত্রণ করেছে। যার কারণে তাদের চাওয়া অনুযায়ী নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। এই নেতারা পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের কথা অনুযায়ী দল পরিচালনা করেছেন। এ কারণে এবার সম্মেলনে কাউন্সিলরদের কাছ থেকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ‘সিলেকশনের’ মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করবেন।
ছাত্রলীগে গণতান্ত্রিক ধারা চালুর জন্যই এই নির্বাচন পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এভাবে নেতা নির্বাচনের মাধ্যমে সংগঠনে খুব ভালো নেতৃত্ব আসেনি। যার প্রমাণ হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিগত তিনটি কমিটির সাবেক নেতারা কেউই পরবর্তীতে রাজনীতিতে ভালো করেননি। যে কারণে এবার ভোট থাকছে না। অতীতের সব কমিটির আগে সবাই জেনে যেত কে হচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতা। কিন্তু এবার ২৯তম সম্মেলনের দিনেও নানা ধরনের গুঞ্জন ছাড়া নির্দিষ্ট কারও নাম শোনা যাচ্ছে না।
ছাত্রলীগে নতুন নেতৃত্বের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, দলে অনুপ্রবেশকারী যেন ঢুকতে না পারে এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী কর্মীকে এবার নেতৃত্বে আনা হবে। সে ক্ষেত্রে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন কিনা, সেটিই শুধু বিবেচ্য বিষয় হবে না। পারাবারিকভাবে তিনি কোন মতের চর্চা করেন, সেটিও বড় বিষয় হবে এবারের কমিটিতে। এ ছাড়া এবারের কমিটিতে অনেকের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুর্বল’ বিষয় হিসেবে যেসব বিষয় পরিচিতি, সেসব বিষয় থেকেও নেতা নির্বাচন করা হবে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়া অবলম্বনের পেছনে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে অনেকটা পিছিয়ে গেছে। কারণ হচ্ছে এখানে অনুপ্রবেশের ঘটনা বেড়েছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এবার পরীক্ষিত এবং আওয়ামী লীগ করা পরিবার ও ছাত্রলীগ করা নেতাকে বেছে নেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, যদি প্রয়োজন হয় এবং দেখা যায় যে ঢাকার বাইরেও স্বচ্ছ কোনো নেতা আছেন, তাহলে তাঁকেও বেছে নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ব্যাপার হিসেবে দাঁড়াবে না। ছাত্রলীগ করা এবং ছাত্রত্ব আছে, এমন নেতা হলেই চলবে।
এদিকে সম্মেলন ঘিরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শেষ মুহূর্তের দৌঁড়-ঝাপে ব্যস্ত। ইতিমধ্যে সম্মলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়েছেন। সবার মধ্যে উত্তেজনা, কে হবেন ছাত্রলীগের আগামী দিনের নেতা!
সম্মেলনের শেষ মুহূর্তে আলোচনায় আছেন যাঁরা:
বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শিক্ষার্থী আলোচনায় আছেন। এর মধ্যে বর্তমান কমিটির আইন বিষয়ক উপসম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ানুল হক চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। কুড়িগ্রামের সন্তান রেজওয়ানুল হক চৌধুরীর বাবা আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং তিনি ভুরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান। রেজওয়ানের দাদা পাকিস্তান আমলে আওয়ামী লীগের এমএলএ ছিলেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসান, সাধারণ সম্পাদক মোতাহের হোসেন নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে আলোচনা আছে। এঁদের বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ছাত্র আদিত্য নন্দী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র শেখ ইনান, আইন বিভাগের সাদ্দাম হোসাইন এবং মাজহার শামীমের নামও আলোচনায় আছে। তবে এবার প্রথমবারের মতো ছাত্রলীগের চারটি মূল পদের একটিতে নারী আসতে পারেন বলেও আলোচনা রয়েছে।
#prothomalo