বীরগঞ্জ নিউজ ২৪ ডেস্কঃ
দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ব্যাংকিং। স্বল্প সময়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে সহজে টাকা লেনদেন করতে পারায় মানুষ এই মাধ্যমের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু সহজ এই মোবাইল ব্যাংকিংও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি প্রতারকচক্র ভয়ঙ্কর প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত প্রতারণার নিত্যনতুন কৌশল উদ্ভাবন করছে। বিকাশের মাধ্যমে এই প্রতারণার ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। জানা গেছে, মোবাইল ফোনে গেছে এই রকম কথা বলে সেই অঙ্কের টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় গ্রাহকদের ফোনে কল দিয়ে অনেক খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমেই বেশি সক্রিয় প্রতারকরা। ভুল করে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা চলে যাওয়ার কথা বলে আকুতি-মিনতি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র। শুধু তাই নয়, বিকাশের হেল্পলাইনের মতো নম্বর থেকে ফোন দিয়েও করা হয় প্রতারণা। সম্প্র্রতি বিকাশ এজেন্টের মোবাইল ফোন নম্বরের রেজিস্ট্রার থেকে গ্রাহকদের ফোন নম্বর কপি করে টাকা দাবি করার সত্যতা পেয়েছে সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া জিনের বাদশা, বালক পীর, লটারি, উপহার পেয়েছেন ইত্যাদি পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকেও অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকরা। এই পর্যন্ত ছয় কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মোবাইল ব্যাংকিং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই প্রতারকচক্রের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে এই সেবা খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা থাকবে না। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণা ঠেকাতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি গ্রাহকদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। পুলিশ জানায়, সাধারণত কিবোর্ড বা সার্ভিস পরিবর্তনের নামেই গ্রাহকরা বেশি প্রতারিত হচ্ছেন। এ ছাড়া মোবাইল নম্বর স্পুফিং কল বা মেসেজ পদ্ধতিতে ভুয়া ‘বিকাশ’ থেকে অ্যাকাউন্টে টাকা যোগ হওয়ার মেসেজ পাঠিয়েও প্রতারণা করা হচ্ছে। লটারি বা অফার জেতার নামেও প্রতারণা হচ্ছে। এ ছাড়া ‘জিনের বাদশা’ পদ্ধতির পুরনো প্রতারণাও চালু রয়েছে।
প্রতারণার শিকার হয়েছেন ঢাকার সূত্রাপুরের লালমোহন দাস এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ রুনা পারভীন। একটি নম্বর থেকে তার মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। অপর প্রান্ত থেকে রুনাকে বলা হয়, বিকাশ নম্বরে চাপ লেগে ভুল করে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৯ হাজার ১৮০ টাকা চলে গেছে। পরক্ষণে ওই নম্বর থেকেই ফের বলা হয়, ভুল করে একই পরিমাণ টাকা চলে গেছে আপনার অ্যাকাউন্টে। বিভ্রান্ত রুনা পারভীন এ সময় তার বিকাশ অ্যাকাউন্ট চেক করে ফোনদাতাকে বলেন, তার বর্তমান ব্যালেন্স ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। নতুন করে তার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা ক্যাশইন হয়নি। এ সময় কলদাতা বলেন, কিছুক্ষণ পরেই মোবাইলে বিকাশের আপডেট তথ্য যাবে। এর কিছু সময় না যেতেই রুনা পারভীনের মোবাইল ফোনে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা ক্যাশইনের তথ্য আসে। ফোনদাতা একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে তাকে ওই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেন। কোনো কিছু না ভেবেই রুনা তার মোবাইল নম্বর থেকে ফোনদাতার কথামতো বিকাশ অপশনে গিয়ে ক্যাশ আউট বাটন চেপে ওই নম্বরে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা লিখে সেন্ড বাটন চাপেন। এরপর দেখতে পান তার অ্যাকাউন্ট থেকে পুরো টাকা চলে গেছে। একপর্যায়ে রুনা মেসেজটি পড়ে দেখতে পান তার মোবাইলে আসা ১৮ হাজার ৫০০ টাকা ক্যাশইনের মেসেজটি বিকাশ থেকে আসেনি। এসএমএসটি আগের নম্বর থেকে এসেছিল। তখন রুনা পারভীনের আর বুঝতে বাকি রইল না যে, প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন তিনি। পরে বহুবার তিনি টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য প্রতারকদের মোবাইলে ফোন করে অনুরোধ করলেও ফিরে পাননি টাকা। উপরন্তু খুন হওয়ার হুমকি পান প্রতারকদের কাছ থেকে। এ বিষয়ে তার ভাই আলামিন পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। পুলিশ মাগুরার শ্রীপুরের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এই চক্রের সদস্য সুজন শেখকে। জব্দ করা হয় দুটি মোবাইল ফোন। পরে তার তথ্যানুযায়ী গ্রেফতার করা হয়, সামাদ, বিপ্লব শেখ, রিয়াজ হোসেন রিয়াজ, রনি মোল্লা ও মাজেদুল মোল্লা ওরফে মাজেদকে। তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় প্রতারণায় ব্যবহূত আরও সাতটি মোবাইল ফোন।
জিজ্ঞাসাবাদে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার কথা স্বীকার করে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, দেশব্যাপী ছড়িয়ে আছে তাদের নেটওয়ার্ক। ঢাকা থেকে সারা দেশের চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। চক্রের সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন বিকাশের দোকানে ওতপেতে থাকে। গ্রাহকদের বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর তথ্য তারা সুকৌশলে স্ক্রিনশট নিয়ে হোয়াটসআপ, ভাইবার, ইমো, মেসেঞ্জারের মাধ্যমে চক্রের অন্য সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। পরে রুনা পারভীনের মতো গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা।
পুলিশ জানায়, রাজধানীতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রতারকচক্রের প্রধান খায়ের চৌধুরী। তার নেতৃত্বে অন্তত ১০০ চক্রের ২ হাজার সদস্য বিভিন্ন পয়েন্টে কাজ করছে। প্রতিটি দলে তার মতো আরও ২০-২৫ জন সদস্য রয়েছেন। প্রতিনিয়ত তারা যেসব দোকান থেকে বিকাশ হয় সেসব দোকানের আশপাশে ঘোরাফেরা করে। কোনো ব্যক্তি বিকাশ করতে এলে কৌশলে যে নম্বরে বিকাশ করা হচ্ছে সে নম্বরটি জেনে বিভিন্ন কৌশলে হাতিয়ে নেয় তারা গ্রাহকের টাকা। পুলিশের হাতে ধরা পড়লে খায়েরই জামিন করিয়ে নেয় তাদের। ডিবির জিজ্ঞাসায়, প্রতারকচক্রের আরেক সদস্য শাহিন হোসেন জানায়, বিভিন্ন কৌশলে প্রতারণা করা হয়। কেউ টাকা দিতে না চাইলে ক্ষতি হবে বলে ভয় দেখানো হয়। তখন টার্গেটকৃত ব্যক্তি টাকা ফেরত দেন। এর পরেই ওই মোবাইল নম্বর বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সুত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন